শিরোনাম :
ঢাকা ক্রেডিটের প্রাক্তন সেক্রেটারি শিক্ষানুরাগী রবীন রোজারিও’র শোক ও স্মরণসভা
একজন শিক্ষানুরাগী হয়ে সমাজকে দিয়ে গেছেন অবারিত আলো। তাঁর কাজের আলো ছড়িয়ে পড়ে শিক্ষা ক্ষেত্রে, সমবায়ে, মন্ডলীতে ও সাধারণ সেবাদানে।
১০ এপ্রিল, সন্ধ্যা ৭টায় ঢাকা ক্রেডিটের বিকে গুড কনফারেন্স হলে ঢাকা ক্রেডিটের উদ্যোগে প্রাক্তন সেক্রেটারি রবীন রোজারিও’র শোক ও স্মরণসভার আয়োজন করা হয়।
ঢাকা ক্রেডিটের প্রেসিডেন্ট বাবু মার্কুজ গমেজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শোক ও স্মরণসভায় রবীন রোজারিও’র পরিবারবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় বক্তারা রবীন রোজারিও’র জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন এবং তাঁর কর্মগুনের মাধ্যমে মঙ্গল কাজের প্রশংসা করেন।
অনুষ্ঠানে ঢাকা ক্রেডিটের প্রেসিডেন্ট বাবু মার্কুজ বলেন, ‘শিক্ষানুরাগী রবীন রোজারিও’র পৃথিবী থেকে চলে যাওয়া খুবই বেদনার! তিনি সমাজের একজন উজ্জল নক্ষত্র ছিলেন। তাঁর আদর্শ হৃদয়ে ধারণ করে আমরা যেন সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারি। তাঁর পরিবারের প্রতি জানাই সমবেদনা। ঢাকা ক্রেডিট সব সময় তাঁর পরিবারের পাশে থাকবে।’
বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নির্মল রোজারিও বলেন, ‘রবীন রোজারিও ছিলেন একজন আদর্শবান ব্যক্তিত্ব ও খাঁটি খ্রিষ্টভক্ত। তিনি সমাজ ও মন্ডলীর জন্য অনেক কাজ করে গেছেন। আমরা আজ তাঁর অবদান কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করছি।’
স্মৃতিচারণে রবীন রোজারিও’র ভাই ড. ফাদার তপন রোজারিও বলেন, ‘রবীনদা সমাজের জন্য মন উজার করে সেবা দিয়ে গেছেন। তাঁর সময় নেতৃত্বের জন্য কোনো পথপ্রদর্শক ছিলো না, তিনি কাউকে অনুসরণ না করে মনের তাগিদে সকলের জন্য সেবার হাত বাড়িয়েছেন। আমরা যেন তাঁর অনুপ্রেরণাদায়ি গুনগুলো হৃদয়ে ধারণ করতে পারি।’
স্মৃতিচারণে রবীন রোজারিও’র আরেক ভাই রঞ্জন এ. রোজারিও বলেন, ‘কিছু স্মৃতি হাসায়, আবার কিছু স্মৃতি কাঁদায়, সেই সাথে রবীনদার স্মৃতিগুলো আমাদের উৎসাহীত করে। তাঁর রেখে যাওয়া কর্ম যেন আমরা ভুলে না যাই।’
এদিন আরো স্মৃতিচারণ করেন রবীন রোজারিও’র সহধর্মিনী প্রণতি রোজারিও, আরএনডিএম সিস্টার সম্প্রদায়ের প্রভিন্সিয়াল সুপিরিয়র সিস্টার রেবা ভেরোনিকা ডি’কস্তা আরএনডিএম, ঢাকা ক্রেডিটের ভাইস-প্রেসিডেন্ট শীরেন সিলভেষ্টার গমেজ ও লক্ষ্মীবাজার নিবাসী ভিক্টর রে।
তারা স্মৃতিচারণে বলেন, ‘রবীন রোজারিও একজন আদর্শ শিক্ষক ছিলেন। তিনি যেমন স্কুলে শিক্ষা দিয়েছেন, তেমনি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজের মাধ্যমেও শিক্ষা দিয়েছেন। তাঁর আদর্শ ও জীবনাচরণ আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।’
শোক ও স্মৃতিসভার সঞ্চালনা করেন ঢাকা ক্রেডিটের সেক্রেটারি পংকজ গিলবার্ট কস্তা।
অনুষ্ঠানের প্রারম্ভিক প্রার্থনা করেন ঢাকা ক্রেডিটের সুপারভাইজরি কমিটির সদস্য স্টেলা হাজরা ও শেষ প্রার্থনা করেন ফাদার তপন ডি’রোজারিও।
উল্লেখ্য, ২৩ মার্চ, সকাল পৌঁনে ৮টায় গুলশান কিউর হাসপাতালে অসুস্থতাজনিত কারণে রবীন রোজারিও শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ অসুস্থ ছিলেন।
মৃত্যুর খবর শুনে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের মাঝে সৃষ্টি হয় শোকাতুর অনুভূতি ও স্বজন হারানো বিহ্বলতা। তার মরদেহ জনগণের শেষবারের মতো দেখা ও শ্রদ্ধা জানানোর জন্য নিজ ধর্মপল্লী দড়িপাড়া, দীর্ঘদিনের আবাস ও কর্মস্থল লক্ষ্মীবাজার গির্জা এবং ঢাকার তেজগাঁও গির্জায় নিয়ে যাওয়া হয়।
২৬ মার্চ, সকাল ১১টায় তেজগাঁও ধর্মপল্লীতে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া খ্রিষ্টযাগের পর তাঁকে সমাহিত করা হয়। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া খ্রিষ্টযাগ অর্পণ করেন ঢাকার অবসরপ্রাপ্ত সহকারী বিশপ থিয়োটনিয়াস গমেজ সিএসসি। তাঁকে সহযোগিতা করেন রবীন রোজারিওর ভাই ফাদার তপন রোজারিও, ফাদার প্রশান্ত রিবেরু, ফাদার রিপন গমেজসহ আরো অনেকে। খ্রিষ্টযাগ শেষে স্যার রবীন রোজারিও’র প্রতি বিভিন্ন সংগঠন, অঙ্গসংগঠন ও নেতৃবৃন্দ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এ সময় ঢাকা ক্রেডিটের পক্ষে সেক্রেটারি পংকজ গিলবার্ট কস্তার নেতৃত্বে শ্রদ্ধা জানায় কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং সদস্যগণ। বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নির্মল রোজারিও’র নেতৃত্বে প্রতিনিধিগণ তাঁর মরদেহের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। আরো শ্রদ্ধা জানায় বিভিন্ন সংগঠন, অঙ্গসংগঠনসহ সাধারণ জনগণ।
পেশাগত জীবনে তিনি ছিলেন একজন স্বনামধন্য শিক্ষক। ১৯৬৬ থেকে ৬৯ সাল পর্যন্ত নাগরীর সেন্ট নিকোলাস উচ্চবিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। ১৯৬৯ সালের শেষের দিকে তিনি লক্ষ¥ীবাজারে সেন্ট গ্রেগরী হাইস্কুলে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৮৬ সালে তিনি নিজেই প্রতিষ্ঠা করেন সেন্ট সিলভেস্টার টিউটোরিয়াল বিদ্যালয়, যা এখনো জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে।
তিনি ছিলেন সমাজের একজন আলোকিত ব্যক্তিত্ব। ১৯৯৩ থেকে ৯৬ সাল পর্যন্ত তিনি দেশের সর্ববৃহত সমবায় প্রতিষ্ঠান ঢাকা ক্রেডিটের সেক্রেটারি ছিলেন। এর আগে তিনি বোর্ড অব ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি তুমিলিয়া খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি: এর প্রাক্তন সেক্রেটারি, দি মেট্রোপলিটান খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লি: এর প্রাক্তন ডিরেক্টর হিসেবে সেবা দিয়েছেন।
রবীন রোজারিও ছিলেন মন্ডলীর কাজে নিবেদিতপ্রাণ। আশির দশক থেকে বিংশ শতাব্দির প্রথমভাগ পর্যন্ত তিনি মন্ডলির বিভিন্ন সেবাকাজে সক্রিয় ছিলেন। ২০০০ সালের জয়ন্তী পালনের ক্ষেত্রে তিনি কঠোর পরিশ্রম দিয়ে গেছেন। চার্চের সব ধরনের কাজে তিনি ছিলেন খ্রিষ্টের নিবেদিত সৈনিক। এছাড়াও তিনি দড়িপাড়া জাগরণী সংঘের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ছিলেন লক্ষ্মীবাজার ঐতিহ্যে মোড়া সুহৃদ সংঘের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য।
রবীন রোজারিও ম্যারেজ এনকাউন্টার এক্লেজিয়াল টিমের কনর্ভেনর ছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি এই সংগঠনে নিরলস অবদান রেখে গেছেন।
১৯৪৭ সালের ৪ মে, কালিগঞ্জের দড়িপাড়া ধর্মপল্লীতে সিলভেষ্টার ডি’রোজারিও ও মার্থা পালমার কোল জুড়ে জন্ম নেন রবীন রোজারিও। পড়াশুনা শেষে তিনি চলে আসেন রাজধানী ঢাকায়। স্ত্রী প্রণতি রোজারিও ও দুই ছেলে এবং এক মেয়ে নিয়ে তিনি লক্ষ্মীবাজারে বসবাস করতেন। এরপর মহাখালীতে গড়ে তোলেন নিজ বাসভবন। সেখানেই তিনি মৃত্যুর আগমুহূর্ত পর্যন্ত বাস করেছেন।