শিরোনাম :
আদিবাসী নারী কল্পনা চাকমার অপহরণ মামলার বিচার ২৩ বছরেও শুরু হয়নি
হিল উইমেন্স্ ফেডারেশনের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কল্পনা চাকমার অপহরণ মামলার বিচার কাজ দীর্ঘ ২৩ বছরেও শুরু হয়নি। ১৯৯৬ সালের ১২ জুন মধ্যরাতে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার নিউ লাল্যাঘোনা গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে অপহরণের শিকার হন তিনি।
১১ জুন সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এক গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে হিল উইমেন্স্ ফেডারেশন। এ সময় তারা কল্পনা চাকমার অপহরণের দ্রুত বিচার দাবি করেন। ‘চিহ্নিত অপহরণকারী লেঃ ফেরদৌস ও তার গংদের সাজার মাধ্যমে আইন-আদালতের কার্যকারিতা প্রমাণের দায়িত্ব সরকারের’ শীর্ষক আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন হিল উইমেন্স্ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি নিরূপা চাকমা, এতে সঞ্চালনা ও লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সাধারণ সম্পাদক মন্টি চাকমা।
গোলটেবিল আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক বজলুর রশীদ ফিরোজ, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম, বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বাংলাদেশ লেখক শিবিরের সভাপতি হাসিবুর রহমান, ব্যারিষ্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, লেখক ও অনুবাদক ওমর তারেক চৌধুরী, ব্যারিষ্টার সাদিয়া আরমান, বাসদ-এর কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য মানস নন্দী, নয়া গণতান্ত্রিক গণমোর্চার সভাপতি জাফর হোসেন, সংগীত সংস্কৃতি প্রাঙ্গনের সদস্য বীথি ঘোষ, শ্রমিক নেতা শহীদুল ইসলাম সবুজ, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক মিতু সরকার, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি ইমরান হাবিব রুমন, বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের সাধারণ সম্পাদক চম্পা বসু, সিপিবি নারী সেলের সদস্য লুনা নুর, শ্রমজীবী নারী মৈত্রীর সভাপতি বহ্নিশিখা জামালি প্রমুখ।
গোলটেবিল বৈঠকে আলোচকরা অভিযোগ করেন, ‘কল্পনা চাকমার অপহরণকারী তৎকালীন কজইছড়ি সেনা ক্যাম্প কমান্ডার লেফটেন্যান্ট ফেরদৌস ও তার সাঙ্গ-পাঙ্গরা এখনো বহাল তবিয়তে রয়ে গেছেন।
আলোচক ব্যারিষ্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ‘কল্পনা চাকমা অপহরণ মামলার তদন্ত কাজই এখনও শেষ হয়নি। তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিলে সেই প্রতিবেদনটাকে আমলে নেয় আদালত। প্রতিবেদনে কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে তখন সেটার বিচার কাজ শুরু হয়। কল্পনা চাকমার অপহরণ মামলার বিচার কি হচ্ছে? বিচার কি আছে কোথাও? কারণ তদন্ত প্রতিবেদনটাই শেষ হয়নি।’
২০১৫-২০১৬ সালে এই মামলার প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। তিনি বলেন, ‘যে সমস্যাটা এখন পর্যন্ত দেখছি, যিনি মামলার তদন্ত করছেন, সময়ের পর সময় চেয়ে যাচ্ছেন। পুলিশ সুপার (এসপি) এই তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন। এক পর্যায়ে এমনও হয়েছে যে, মামলার তদন্ত থেকে অব্যাহতি চেয়েও আবেদন করেছিলেন এই বলে যে, আমি তো তদন্ত করে কিছু পাচ্ছি না, আমাকে অব্যাহতি দেন।’
তিনি বলেন, ‘এখানকার দেয়া নোটেও বলা হয়েছে, যদি কোনো বিশেষ বাহিনী জড়িত থাকে, সেটা সেনাবাহিনী হোক কিংবা রাস্ট্রের যেকোনো বাহিনী হোক; কোনো বাহিনীর সদস্য জড়িত থাকলে সেটার তদন্তও শেষ হয় না, বিচারও হয় না।’
এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম শুধু নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলা বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
মামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকাকালীন নিজের তৎপরতার কথা জানিয়ে জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ‘অভিযুক্ত লেফটেন্যান্ট ফেরদৌসকে ২০১৫-২০১৬ সালের দিকে আমরা তাকে ট্রেস (খোঁজার) চেষ্টা করেছি। ওই সময় আমরা খোঁজ পেয়েছিলাম, সে ময়মনসিংহে আছেন কিন্তু তার কোন পদোন্নতি হয়নি। এরপরের ঘটনা কিন্তু আর জানি না।’
তিনি বলেন, ‘তার যদি বিচার হয় তাহলে তার বাহিনীও তো তার ভাগীদার হয়। এ রকমের একটা ধারণা দাঁড়িয়ে গেছে। এই জায়গাগুলো থেকে বের হতে হবে।’
অনুষ্ঠানে উইমেন্স্ ফেডারেশনের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘কল্পনা চাকমা অপহরণ হওয়ার পর এ নিয়ে হাজার রকমের প্রতিবন্ধকতা ও ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। হিল উইমেন্স্ ফেডারেশন এখনও হাল ছেড়ে দেয়নি। এর সুষ্ঠু বিচার ও অপরাধীদের বিচার বাংলার মাটিতে হতেই হবে বলে দাবি করেন।’