শিরোনাম :
বিভিন্ন ডিনোমিনেশনের মধ্যে ঐক্য জোরদারের উদ্যোগ
ডিসি নিউজ ॥ ঢাকা
‘কেউ একা একা এক হতে পারে না, অনেকে মিলে প্রার্থনা, ত্যাগস্বীকার ও সেবাকাজের মাধ্যমে এক হতে হয়। ঈশ্বরের সাথে খ্রিষ্ট যে এক, তা ক্রুশের মধ্য দিয়ে ত্যাগ ও পরিশ্রমের মাধ্যমে করে দেখিয়েছেন,’ আন্তঃধর্মীয় নেতৃবৃন্দের সমাবেশে এই কথা বলেন ঢাকার অবসরপ্রাপ্ত সহকারী বিশপ থিয়োটনিয়াস গমেজ সিএসসি।
‘ঐক্যের পরিচর্যা: সহনশীলতা, ক্ষমা ও ভালবাসায় মিলনসমাজ’ মূলসুর নিয়ে মোহম্মদপুর সিবিসিবিতে (কাথলিক বিশপস্ কনফারেন্স অব বাংলাদেশ) ইউনাইটেড ফোরাম অব চার্চেস, বাংলাদেশ’র (ইউএফসিবি) আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় অল খ্রিষ্টান কনফারেন্স।
২৭ জুলাই, সকাল সাড়ে ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত আন্তঃমান্ডলিক ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের অংশগ্রহণে এই কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়।
আরো পড়ুন: ডেঙ্গুজ্বরে খ্রিষ্টান মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যু
অনুষ্ঠানে বিশপ থিয়ো বলেন, ‘আমরা তখনই ঐক্য গড়তে পারবো, যখন নিজে এক হতে পারবো। আমাদের নিজেদের ভাবতে হবে, আমরা নিজের মধ্যে বিভেদ কিনা। আমাদের নিজেদের মধ্যে বিচ্ছিন্নভাব ত্যাগ করতে হবে।’
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাপ্টিস্ট সংঘ প্রধান জয়ন্ত অধিকারী বলেন, ‘আমরা এই সমাজেরই একটি অংশ। আমরা যদি নিজেদের আলাদা ভাবি, তা সঠিক চিন্তা নয়। আমরা আজ ঐক্য ও শান্তির তীর্থযাত্রায় সামীল হয়েছি। আমাদের যাত্রা ইতিবাচক হলেই আমরা ঐক্যে পৌঁছাতে পারবো।’
ঢাকার আর্চবিশপ কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিও সিএসসি বলেন, ‘এবার ৭ম বারের মতো খ্রিষ্টান নেতৃবৃন্দের সমাবেশ হচ্ছে। আমাদের কিছু মিলন রয়েছে এবং তা খ্রিষ্টান সমাজের জন্য। সমাজের মিলন প্রতিষ্ঠা করতে হলে আমাদের ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।’
এ সময় তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের শত জন্মবাষির্কী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীকে উপলক্ষ্য করে বলেন, ‘জাতির পিতার শত জন্মবাষির্কী ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী আমাদের একসাথে নিয়ে আসবে। আমরা বাংলাদেশের খ্রিষ্টানরাও এই উৎসবগুলো পালন করবো। প্রচার-প্রকাশনা, দর্শন, সাহিত্য, সেমিনার, আলোচনা, প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণের মাধ্যমে আমরা এই উৎসবগুলো পালন করতে পারি। এগুলো হবে খ্রিষ্টান সমাজে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ।’
‘আমাদের ঐক্য আলোচনায় আসতে পারে কীভাবে সবাই মিলে একটি অনুষ্ঠান করা যায়, বঙ্গবন্ধুর শত জন্মবাষির্কী নিয়ে আলোচনা এবং আমাদের মধ্যে ঐক্য দৃশ্যমান করা’ বলেন কার্ডিনাল প্যাট্রিক।
আন্তঃধর্মীয় নেতৃবৃন্দের এই ফোরাম মূলত বিভিন্ন মন্ডলীর মধ্যে ঐক্য গড়ে তুলে একটি অংশগ্রহণমূলক খ্রিষ্টীয় সমাজ গড়ে তোলাই হলো লক্ষ্য। নেতৃবৃন্দের সমাবেশে ৫জন বক্তা তাদের উপস্থাপনায় বিভিন্নভাবে ঐক্য গড়ে তোলার দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। ফাদার শিমন প্যাট্রিক গমেজ, সূচিত্রা মেহেরা, কাজল সেন গুপ্ত, ড. মিল্টন বিশ্বাস ও চন্দন গমেজ ঐক্যে বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করেন।
আলোচকগণ অংশগ্রহণকারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে কয়েকটি সুপারিশ বের করে আনেন। ঐক্য গড়ে তোলার জন্য একটি মডেল প্রতিষ্ঠা করা; বাংলাদেশে খ্রিষ্টানদের একটি নির্দিষ্ট পরিসংখ্যান বের করা; যারা নেতৃত্ব দেন, তাদের ব্যক্তিত্ব অনুসরণ করা মতো আদর্শ নেতৃত্বদানকারী হয়ে ওঠা; সবকিছু পরিবর্তনের পূর্বে নিজেকে ইতিবাচক পরিবর্তন করা বিষয়গুলো বক্তা ও অংশগ্রহণকারীদের আলোচনায় ওঠে আসে।
এ সময় ইউএফসিবি’র সাধারণ সম্পাদক মার্থা দাশ জানান, বিগত বছর ইউএফসিবি যা করেছে তা হলো- ঢাকায় সকল মন্ডলী মিলে একটি জায়গায় বড়দিন উৎসব পালন, নতুন পাঠ্যপুস্তকে খ্রিষ্টান নৈতিকতা শিক্ষার জন্য লেখদের নাম শিক্ষা বোর্ডে প্রেরণ, শিক্ষানীতির বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রণালয়ে আলোচনা করা, গারো ব্যাপ্টিস্ট ফোরামের সমস্যা নিয়ে সমাধানের জন্য আলোচনা করা।
বাংলাদেশ খ্রিষ্টান এসোসিয়েশনের মহা সচিব হেমন্ত আই. কোড়াইয়া জানান, ‘ইতিমধ্যে বিভিন্ন মন্ডলীর সমন্বয়ে আমরা কাজ করছি। নতুন নতুন চার্চগুলো যেন একে অপরের সাথে মিলতে পারে সেই ব্যবস্থাও করছি। জাতির পিতার শত জন্মবাষির্কী উপলক্ষে সকল মন্ডলীর অংশগ্রহণে একটা বড় অনুষ্ঠান হতে পারে। এতে বাংলাদেশের খ্রিষ্টান সমাজ যে এক ও ঐক্যবদ্ধ তা প্রকাশ পাবে।’
বাংলাদেশ খ্রিষ্টীয় যোগাযোগ কেন্দ্রের পরিচালক ও সাপ্তাহিক প্রতিবেশীর সম্পাদক ফাদার আগস্টিন বুলবুল রিবেরু বলেন, ‘আজকের উদ্দেশ্য হলো, খ্রিষ্টমন্ডলী যে এক, তার বহির্প্রকাশ ঘটানো। আজকের আলোচনা হলো, কীভাবে আমরা এক হয়ে ঐক্য গড়ে তুলতে পারি।’
অনুষ্ঠানে বিশিষ্টজনের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মহিলা সংরক্ষিত আসনের মাননীয় এমপি অ্যাডভোকেট গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার, বিশপ শরৎ ফ্রান্সিস গমেজসহ বিভিন্ন মন্ডলীর প্রধানগণ এবং সাধারণ খ্রিষ্টভক্তরা।
আরো পড়ুন:
‘সাংস্কৃতিক চর্চাই পারে মানুষকে সুস্থ-স্বাভাবিক রাখতে’
ছিনতাই করতে ব্যর্থ হয়ে খ্রিষ্টান নারীকে ছেলেধরা গুজবে মারধর