ঢাকা ,
বার : সোমবার
তারিখ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
বাংলা : ৯ পৌষ ১৪৩১
Dcnewsbd Facebook
Dcnewsbd Twitter

শিরোনাম :

প্রথম পাতা দেশ দেড় যুগেও সম্পন্ন হয়নি নওগাঁর আলফ্রেড সরেন হত্যার বিচার

দেড় যুগেও সম্পন্ন হয়নি নওগাঁর আলফ্রেড সরেন হত্যার বিচার

0
652

|| ডিসি নিউজ ||
নওগাঁর আদিবাসী নেতা আলফ্রেড সরেনের হত্যার বিচার ১৮ বছরেও সম্পন্ন হয়নি।
১৮ আগস্ট ২০০০ সালে নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার ভীমপুর আদিবাসী পল্লীতে হাতেম-গদাই গংদের সন্ত্রাসীদের হামলায় আদিবাসী নেতা আলফ্রেড সরেন নৃসংশভাবে খুন হন।
ওই ঘটনায় সন্ত্রাসীরা ব্যাপক তান্ডব চালিয়ে আদিবাসী পল্লীর ১১টি পরিবারের বাড়ি-ঘর ভাঙচুর লুটপাটসহ অগ্নি সংযোগ করেন। হামলায় আদিবাসী নারী-শিশুসহ প্রায় ৩০ জন মারাত্মক আহত হয়। ওই সন্ত্রাসী ঘটনার পর নিরাপত্তার জন্য সেখানে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প বসানো হয়। পরে তা গুটিয়ে নেওয়া হয়।
১৮ আগস্ট ২০১৯ আলফ্রেডের ১৯তম মৃত্যু বার্ষিকী হলেও ভূমিদসূদের হাতে খুনের শিকার হন। হত্যার বিচারকার্য এখনো সম্পন্ন হয়নি। ভীমপুরের আদিবাসীরা এখনো হত্যার বিচার নিয়ে সংশয়ে আছেন। জামিনে থাকা আসামিরা হুমকি দিচ্ছে আদিবাসীদের। অনেক পরিবার ভীমপুর আদিবাসী পল্লী ত্যাগ করে অন্যত্র চলে গেছে অনেক পরিবার। আসামিদের ভয়ে জমিতে চাষাবাদ করতে পারছে না। সাক্ষীরা অনেকে পল্লী ছেড়ে চলে যাওয়ায় মামলার ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্ধিহান আলফ্রেডের প্রবাসী ছোট বোন রেবেকা সরেন।
মহাদেবপুর উপজেলার ভীমপুর আদিবাসী পল্লীতে গিয়ে দেখা যায়, আসামিদের হুমকির কারণে ২৪ পরিবারে মধ্যে এখন মাত্র আট-নয়টি পরিবার রয়েছে। বাকিরা প্রাণ বাঁচাতে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। আলফ্রেডের পিতা-মাতাও মারা গেছেন। তাঁর স্ত্রী আর এই পল্লীতে থাকে না। একমাত্র মেয়ে বিয়ে হয়ে বর্তমানে ঢাকায় চাকরি করছে।
এ মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাড. মহসীন রেজা জানান, আলফ্রেড সরেন হত্যার ঘটনায় তার বড় ভাই কমল সরেন ছোট বোন রেবেকা সরেন বাদী হয়ে হত্যা ও জননিরাপত্তা আইনে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় পুলিশ ৯১ জন আসামির নামে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। এর মধ্যে পুলিশ কয়েকজন আসামিকে গ্রেপ্তার করে। ওই সময় নওগাঁ দায়রা জজ আদালতে মামলার সাক্ষী গ্রহণ শুরু হয় এবং ৪১ জন সাক্ষীর মধ্যে সেই সময় ১৩ জনের সাক্ষী গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছিল। ৪ দলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর জননিরাপত্তা আইন বাতিল করে।
ওই সময় পলাতক সীতেষ চন্দ্র ভট্টাচার্য ওরফে গদাই ও হাতেম আলীসহ ৬০ জনের অধিক আসামি জননিরাপত্তা আইনের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট পিটিশন করলে জননিরাপত্তা আইনের সকল রিট হাইকোর্ট খারিজ করে দেন। এর ফলে আসামিরা জামিনে বেড়িয়ে আসে। এরপর বাদিগণ অ্যাপিলেড ডিভিশনে মামলা দায়ের করেন। বর্তমানে আলফ্রেড সরেন হত্যা মামলাটি অ্যাপিলেড ডিভিশন শুনানি অন্তে পূর্ণাঙ্গ শুনানির জন্য হাইকোর্ট ডিভিশনে প্রেরণ করেছে। তিনি রিটগুলো দ্রুত শুনানি করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান।
জাতীয় আদিবাসী পরিষদের উপদেষ্টা জয়নাল আবেদীন মুকুল বলেন, আদিবাসী নেতা আলফ্রেড সরেনকে হত্যার পর অগ্নিসংযোগ করে, নারী ও শিশুদের ওপর নির্যাতন করে। হত্যার পর জাতীয় আদিবাসী পরিষদের নেতৃত্বে জাতীয় নেতৃবৃন্দ নিয়ে ১৮/২০ হাজার লোকের সমন্বয়ে আন্দোলন সংগ্রাম করে পরবর্তীতে সফল লড়াই করেছিলাম। তিনি আরো বলেন, সারা দেশে আদিবাসীদের ওপর নির্যাতন হচ্ছে। সরকারের নিকট অবিলম্বে আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি নিশ্চিত করণ ও পৃথক স্বাধীন ভূমি কমিশন গঠনসহ হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
নিহত আলফ্রেড সরেনের ছোট ভাই মহেশ্বর সরেন বলেন, আসামিরা এখনো আমাকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে। ৬৩ বিঘা জমির মধ্যে ৩৩ বিঘা জমি তারা নিয়ে নিয়েছে। বাকী ৩০ বিঘা জমিরও ভূমি অফিসের যোগসাজেসে চেক কেটে নিয়েছে। আমার ভাই হত্যার পর আদিবাসীরা অনেক আন্দোলন সংগ্রাম করেছে বিচারের দাবিতে। হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র সুবল কিস্কু (রাজশাহী তানোরের অধিবাসী) ডিসিনিউজকে জানান, নওগাঁর আলফ্রেড সরেন সংখ্যালঘু আদিবাসীদের জমি নিয়ে সংখ্যাগুরু, ভূমি দস্যু এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সাথে জমি নিয়ে বিরোধ সৃষ্টিহয়। সেখানে আলফ্রেড এর তীব্র প্রতিবাদ করেছিলেন। প্রতিবাদের কারণে তিনি নৃসংশভাবে সংখ্যাগুরুদের কাছে হত্যার শিকার হন। আলফ্রেড মূলত আদিবাসীদের অধিকার নিয়ে কাজ করতেন।
জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, নওগাঁ জেলা শাখা সূত্রে জানা গেছে, ১৮ আগস্ট সকালে ভীমপুরে আলফ্রেড সরেনের সমাধীতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানানো হয়।