ঢাকা ,
বার : সোমবার
তারিখ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
বাংলা : ৯ পৌষ ১৪৩১
Dcnewsbd Facebook
Dcnewsbd Twitter

শিরোনাম :

প্রথম পাতা ফিচার কারিগরি শিক্ষা গ্রহণকারীরা পাস করার পরই চাকরি পায়: দিলু পিরিছ

কারিগরি শিক্ষা গ্রহণকারীরা পাস করার পরই চাকরি পায়: দিলু পিরিছ

0
3264

বর্তমান সরকার ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ ও ২০৪১ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে উন্নত দেশে উন্নীত করার লক্ষে দীর্ঘমেয়াদী কর্ম পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। বিভিন্ন সেক্টরের মধ্যে কারিগরি শিক্ষার বিষয়েও বাংলাদেশ সরকার বিশেষ নজর দিচ্ছে। কর্মদক্ষ জনগোষ্ঠি, উদ্যোক্তা সৃষ্টি, আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিনির্মাণসহ নানা বিষয় নিয়ে বাংলাদেশ দ্রুততার সাথে এগিয়ে যাচ্ছে। কারিগরি শিক্ষা প্রদানে মট্স একটি অনন্য প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশসহ বিদেশেও মটসের একটি আলাদা সুনাম রয়েছে। মটসের কারিতাস বাংলাদেশের একটি ট্রাস্ট। ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দ হতে মট্স যাত্রা শুরু করে এখন দেশের একটি সেরা কারিগরি প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত। মটসের নব নিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডমিনিক দিলু পিরিছের সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন ডিসি নিউজের বার্তা সম্পাদক রবীন ভাবুক

কারিগরি শিক্ষায় মটসের অবস্থান কোথায়? কী কী প্রশিক্ষণ প্রদান করছে?
ডমিনিক দিলু পিরিছ:
স্বাধীনতা পরবর্তী সময় ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে যখন বাংলাদেশ অবকাঠামো বিনির্মাণের প্রক্রিয়ায় ছিল, সেই সময়ই কারিতাস সুইজারল্যান্ডের সহায়তায় কারিতাস বাংলাদেশ মট্স প্রতিষ্ঠা করে। তখন মূলত কৃষি যন্ত্রপাতির উপর তিন বছর ব্যাপি দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণ দেয়া হত। কিন্তু পরবর্তী সময়ে চাহিদানুসারে এখানে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ সন্নিবেশিত করা হয়। ২০০৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধিনে বিভিন্ন টেকনোলজির উপর চার বছর ব্যাপি ডিপ্লোমা কোর্স শুরু করা হয়। পাশাপাশি সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ আমরা করছি। বর্তমানে এখানে ৮০ ধরনের মড্যুলার বা শর্ট কোর্স রয়েছে। কারিতাস টেকনিক্যাল স্কুলও মট্স ট্রাস্টি বোর্ডের অধিনে পরিচালিত হয়।

বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনার সাথে তাল মিলিয়ে মট্স কীভাবে কাজ করছে?
ডমিনিক দিলু পিরিছ: ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের যে উন্নয়ন পরিকল্পনা রয়েছে, একটা দেশের উন্নয়নের জন্য মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশ মানুষ যেন কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারেন। উন্নত দেশগুলোর দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, তাদের মোট জনসংখ্যার ৫০ শতাংশের বেশী মানুষ কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত, যে কারণে তারা উন্নতির শিখরে উঠতে পেরেছেন। প্রধানমন্ত্রীর যে উপলদ্ধি ও পরিকল্পনা, আমরা মট্স ও কারিতাস টেকনিক্যাল স্কুল সেই উদ্যোগের সাথে তাল মিলিয়ে কাজ করছি।

উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে মট্স কীভাবে সহয়তা করে? দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে মট্স কতটুকু সফল?
ডমিনিক দিলু পিরিছ:
আমরা বাজার চাহিদা অনুযায়ী কর্মপ্রশিক্ষণ দিচ্ছি। উদ্যোক্তা, কর্মসংস্থান ও আত্মকর্মসংস্থানের সহযোগিতা করছি। যারা উদ্যোক্তা হতে চান, তারা বিভিন্ন স্থান থেকে ঋণ নিয়ে যাত্রা শুরু করতে পারছেন। কারিতাস ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্পসহ অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যারা ঋণ সহায়তা দিয়ে সহযোগিতা করছেন। পাশাপাশি আমরা সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পও বাস্তবায়ন করছি, যে সকল প্রকল্পে ঋণপ্রাপ্তির সুযোগ রয়েছে। আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে যে সকল ছেলেমেয়েরা পাস করে বের হচ্ছে, কারিতাসের অঞ্চল ও মট্স পর্যায়ে আমাদের জব ক্রিয়েশন অফিসার রয়েছেন, তাঁরা কর্মসংস্থানে সহায়তা করছেন। দেশে ও দেশের বাহিরের বিভিন্ন সনামধন্য প্রতিষ্ঠানের সাথে মট্স এর যোগাযোগ রয়েছে এবং আমাদের ছেলেমেয়েরা সেখানে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে। আসলে যে মানের প্রশিক্ষণ আমরা দেই, দেখা যায় ছেলেমেয়েদের কোর্স শেষ হবার আগেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাঁদের কর্মী চাহিদা আমাদের কাছে পাঠান। বিভিন্ন ট্রেডে চাকরির জন্য ছেলেমেয়েদের আমরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পাঠাতে পারি। দেশের উন্নয়নে দক্ষ মানব সম্পদ সৃষ্টিতে মট্সসহ আমাদের দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে আরো ৩১টি আবাসিক ও অনাবাসিক কেন্দ্রের মাধ্যমে নিরবিচ্ছিন্নভাবে প্রশিক্ষণ প্রদান করে সরকারের মিশন, ভিশন পূরনের জন্য কাজ করে যাচ্ছে।

আরো পড়ুন: পাগাড়ের তরুণ উদ্যোক্তা জনির গল্প

এ পর্যন্ত আমরা প্রায় দুই লক্ষ বেকার ও দরিদ্র ছেলেমেয়েকে কারিগরি প্রশিক্ষণ দিয়েছি। তাঁরা এখান থেকে গ্রাজুয়েট হওয়ার পর দেশে ও দেশের বাইরে সুনামের সাথে কাজ করছেন। আবার অনেকে আত্মকর্মসংস্থানের পথ বেছে নিয়েছে।

কারিগরি শিক্ষা প্রদানের ক্ষেত্রে মটসের এর চ্যালেঞ্জগুলো কী?
ডমিনিক দিলু পিরিছ:
আমরা যেমন অনুভব করি কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিতের হার বাড়াতে হবে। তেমনি এটাকে পুঁজি করে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। কারিগরি শিক্ষার হার বাড়াতে গিয়ে অনেক কারিগরি প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেছে। এর মধ্যে কিছু ভাল রয়েছে, কিছু অর্থ উপার্জনের জন্যও প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। দেখা যায়, বর্তমানে ব্যাঙের ছাতার মতো বেশকিছু কারিগরি প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেছে। যেখানে মানসম্মত প্রশিক্ষণ হচ্ছে না। সেক্ষেত্রে দেখা যায়, বাস্তবতায় আমরা কারিগরি শিক্ষায় যে ফল আশা করছি, সেখানে পৌঁছাতে পারছি না।
আর মটসের দিক থেকে যে চ্যালেঞ্জ রয়েছে, মট্স তার নিজের আয়েই পরিচালিত হচ্ছে। যেহেতু মট্স বাংলাদেশ কারিতাসের একটি ট্রাস্ট, তাই এখানে বেশ কিছু মানবিক দিক বিবেচনায় নিতে হয়। এখানে কর্মীদের দীর্ঘমেয়াদী নানা ধরনের সুযোগ সুবিধা রয়েছে, যাতে প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা ব্যয় বেড়ে যায়। মটসের একটি বড় ব্যয় নির্বায়ের বিষয় রয়েছে, তাই আমরা প্রশিক্ষণের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রোডাক্টও তৈরি করে আয় করছি। এখানেও দেখা যায় গুণগতমানের দিক থেকে আমাদের প্রোডাক্ট ভাল হলেও, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গুণগত মানহীন জিনিসের সাথে অনেক সময় প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ছে। আবার অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা মট্স সম্পর্কে জানে এবং মট্স এর প্রশিক্ষণ ও প্রোডাক্টের মানের দিক থেকে আমরা কোনো আপোস করি না, তাও জানে বিধায় তারা মটসের কাছেই আসেন। সবাই জানে আমরা কাজ কম করবো, কিন্তু ভাল কাজ করবো। এটা আমাদের লক্ষ্য।

এ ছাড়াও আমরা দুই শতর-ও বেশি ছেলেমেয়েদের বিনা বেতনে ও খরচে প্রশিক্ষণ দেই। প্রত্যন্ত অঞ্চলের দরিদ্র, মেধাবী ছেলেমেয়েদের এখানে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। যাদের কোনো বেতন, থাকা-খাওয়ার খরচ লাগে না। এ ক্ষেত্রেও আমাদের আর্থিক বিষয়টা বিবেচনায় রাখতে হয়।

মট্স নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
ডমিনিক দিলু পিরিছ:
আমি নতুনভাবে মট্স’র দায়িত্ব নিয়েছি। জানি এখানে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। দীর্ঘ সময় থেকে এই কারিগরি শিক্ষার প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত আছি। তাই আমি জানি কীভাবে মট্স পরিচালনা করতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, আমার যে অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও সততা রয়েছে, তা দিয়ে মট্সকে আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবো।

সাধারণ শিক্ষা ও কারিগরি শিক্ষা কোনটা এগিয়ে রাখবেন? বাংলাদেশের পেক্ষাপটে কোনটি গুরুত্বপূর্ণ?
ডমিনিক দিলু পিরিছ:
বাস্তবতায় দেখা যায়, সাধারণ শিক্ষায় লক্ষ লক্ষ ছেলেমেয়েরা পাস করে বসে থাকছে। তারা চাকরি পাচ্ছে না। সেখানে কারিগরি শিক্ষা গ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা পাস করে বের হবার সাথে সাথেই চাকরি পাচ্ছে। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন কোম্পানির চাহিদানুসারেও আমরা লোক দিতে পারছি না। অর্থাৎ কারিগরি শিক্ষার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এক সময় একটা ধারণা ছিল, যারা পড়াশুনায় ভাল না বা কিছুই করতে পারে না, তাদের জোর করে কারিগরি শিক্ষায় ভর্তি করে দেওয়া হতো। এখন এই ধারণার পরিবর্তন হয়েছে। তারা বুঝতে পারছে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত হলে, তাকে বেকার থাকতে হবে না। পরিবার, সমাজ ও দেশের জন্য তাকে আর বোঝা হয়ে থাকতে হবে না, সে দেশে কর্মদক্ষ ব্যক্তিতে পরিগণিত হবে।

বেকারত্ব দূরীকরণে কারিগরি শিক্ষা কীভাবে ভূমিকা রাখছে?

আরো পড়ুন: অনলাইনে কাজ শিখিয়ে ৩০০ জনের বেকারত্ব দূর করেছেন সুবীর নকরেক

আমরা দেশের দরিদ্র, বেকার, হতাশাগ্রস্ত ছেলেমেয়েদের খুঁজে বের করি এবং বোঝাতে চেষ্টা করি কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে নিজেকে বদলে ফেলার। তখন তারা নিজেরাই এটা অনুভব করে হতাশা ও দারিদ্রতা থেকে বের হয়ে আসে।

পাঠকদের উদ্দেশে কিছু বলুন
ডমিনিক দিলু পিরিছ:
মট্স-এ আপনাদের সবাইকে আসার আহ্বান জানাই। আপনারা আসবেন, মট্স পরিদর্শন করবেন। কোনো প্রোডাক্ট প্রয়োজন হলে আমদের অবশ্যই জানাবেন। আমরা প্রোডাক্ট দিয়ে প্রমাণ করবো, মট্স কোন মানের কাজ করে। দেশে বা দেশের বাহিরে, সরকারি ও বেসরকারিভাবে যদি খবর নেয়া হয়, দেখা যাবে মটসের প্রশিক্ষণ ও প্রোডাক্টেও একটা আলাদা সুনাম রয়েছে। মটসের সুনাম যেন অব্যহত থাকে, এ ক্ষেত্রে আপনাদের সকলের সহযোগিতা আমাদের প্রয়োজন।

আমরা কারিতাসের মূল্যবোধের সাথে এগিয়ে যেতে চাই। প্রান্তিক মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। পাশাপাশি সরকারের যে দীর্ঘমেয়াদী ২০২১ ও ২০৪১ খ্রিষ্টাব্দের উন্নয়ন কর্মপরিকল্পনা রয়েছে, তার সামিল হয়ে ভূমিকা রাখতে চাই॥

আরো পড়ুন: ঘরে বসে অনলাইনে আয় করছেন খ্রীষ্টিনা