ঢাকা ,
বার : সোমবার
তারিখ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
বাংলা : ৯ পৌষ ১৪৩১
Dcnewsbd Facebook
Dcnewsbd Twitter

শিরোনাম :

প্রথম পাতা ফিচার দেশের প্রথম আদিবাসী নারীদের ব্যান্ড এফ মাইনরের গল্প

দেশের প্রথম আদিবাসী নারীদের ব্যান্ড এফ মাইনরের গল্প

0
3537

এফ দিয়ে হয় ফিমেল (নারী), ফ্রিডম (স্বাধীন)। আজ যাদের গল্প বলতে এসেছি তারা হলেন দেশের প্রথম আদিবাসী নারী ব্যান্ড দল ‘এফ মাইনর’। তারা সবাই আদিবাসী মেয়ে। পড়ছেন বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে। পাশাপাশি গান গেয়ে জয় করছেন লাখো দর্শক শ্রোতার হৃদয়। সম্প্রতি তাদেরকে ঢাকা ক্রেডিট থেকে একটি বেইজ গীটার উপহার দিয়েছেন ঢাকা ক্রেডিটের প্রেসিডেন্ট মি: বাবু মার্কুজ গমেজ। বেইজ গীটার পেয়ে তারা ঢাকা ক্রেডিটকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। এই ব্যান্ডের সদস্যরা হলেন পিংকি চিরান, নাদিয়া রিছিল, গ্লোরিয়া মান্দা, একিউ মারমা ও দিবা চিছাম। চলুন শোনা যাক এফ মাইনরের গল্প। এফ মাইনরের পক্ষে আমাদের সাথে কথা বলেছেন ব্যান্ডের লিড ভোকাল পিংকি ও নাদিয়া। লিখেছেন সুমন কোড়াইয়া

এফ মাইনর ব্যান্ডের যাত্রা শুরু হয় কিভাবে এমন প্রশ্নের জবাবে পিংকি বলেন, ২০১৬ সালের ২৮ অক্টোবর এফ মাইনরের যাত্রা শুরু হয়। এফ মাইনরের যখন যাত্রা শুরু করে তখন আমরা তিনজন মেয়ে ছিলাম। আমি, নাদিয়া এবং আরেকজন চাকমা মেয়ে। তারপর আমাদের প্রতিষ্ঠাতা ও সহপ্রতিষ্ঠাতা যাদু রিছিল দাদা ও অন্তর তারা দু’জন মিলে আমাদের তিনজনকে নিয়ে এফ মাইনরের যাত্রা শুরু করেন।

প্রথমে আমরা যখন গানের দল গঠন করি তখন পাঁচজন মিলে চিন্তা করলাম কি নাম দেওয়া যায়। একেকজন একেক নাম প্রস্তাব দেওয়ার পরে এফ মাইনর নামটা পছন্দ করলাম। সেখান থেকেই ‘এফ মাইনর’ নাম আর আমাদের যাত্রা শুরু। তারপর আস্তে আস্তে আমরা সদস্য সংখ্যা বাড়ালাম। তিনজন থেকে এখন পাঁচজন। তখন প্রতিষ্ঠাতা যাদু দা বললেন, ‘এখতো তোমরা পারবা। এখন আমরা না থাকলেও চলবে।’ এখন তারা নিজেদের কাজ নিয়েই ব্যস্ত। আমরাও আমাদের কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরেছি।
এফ মাইনরের কোন অর্থ আছে কিনা জানতে চাইলে পিংকি বলেন, এফ মাইনর এর অনেক অর্থ হয়। তবে যখন নামটা রাখি তখন কর্ডের নাম অনুসারে রেখেছিলাম। এফ মাইনর একটি গীটারের কর্ড এর নাম। সেই নাম অনুসারে আসলে নামটা রাখি। যখন আমরা আরো বিস্তারিত বর্ণনা করি তখন অনেকগুলো অর্থ পাই যেমন ফিমেল, ফ্রিডম, ফাইটার মানে এফ দিয়ে যতগুলো শক্তিশালী ওয়াড বুঝানো হয়।
গান শেখার ব্যাপারে নাদিয়া বলেন, ছোটকাল থেকেই হোস্টেলে বড় হয়েছি। টুকটাক গান শেখা হতো। সেভাবে কারো কাছেই গান শিখি নাই, হোস্টেলে থেকেই গানটা শিখেছি। ছোট থেকেই ইচ্ছা ছিল সিঙ্গার হব বা এরকম কিছু একটা করব কিন্তু ওরকম কিছু হয়ে ওঠেনি। যারা ব্যান্ড দলে আছে তারাও কেউ শিখে নাই, তারাও আমার মত একই রকম ছিল ছোট বেলায় টুকটাক গান শিখতো।
পিংকি, নাদিয়াদের এখন ব্যান্ডটা নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। তারা বলেন, কিভাবে আরো ভালো করা যায় সেটা নিয়ে আমরা কাজ করছি। আমাদের একটা ফেসবুক পেইজ আছে। তারপর আমাদের যারা চেনা জানা আছে পরিচিত জনরা আছে যে যখন নক করে। তারা আমাদের পেইজে নক করে, মোবাইল নাম্বার জোগার করে। পেইজ থেকে আমরা ডিল করি।

এই দলকে নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী? পিংকি বলেন, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা আসলে অনেক বড়। আমাদের স্বপ্ন এবং আশা বিশাল রকমের। যখন আমরা প্রথম শুরু করি, তখন আমাদের উদ্দেশ ছিল যে, আমরা আদিবাসী মেয়ে গানের দল। আমাদের আদিবাসীদের মধ্যে যে কালচারটা হারিয়ে যাচ্ছে, যেসব গানগুলো আজ গাওয়া হচ্ছে না, সেসব গানগুলো চর্চা করবো। মানুষের কাছে তুলে ধরা এরকম একটা স্বপ্ন ছিল। কিন্তু আস্তে আস্তে স্বপ্নটা বড় হচ্ছে। এখন আমরা শুধু সেটা নিয়েই বসে নেই। এরকম না যে শুধু আমাদের গানগুলোই চর্চা করবো। যে গানগুলো আমরা ছোটবেলায় শুনতাম এখন আর শুনি না আমরা এখন সে গানগুলো গাই। আর আমাদের নিজস্বতা তুলে ধরি দেশের মানুষের কাছে, বিশে^র কাছে। যেহেতু একটা ব্যান্ড হিসেবে আছি সেহেতু আমাদের আরো একটা আশা আছে যেন এখন আমরা নিজেরাও গান তৈরি করতে পারি। নিজেদের একটা নামের জন্য, নিজের একটা পরিচিতির জন্য। দেশে এখন যে বড় বড় ব্যান্ডগুলো আছে তাদের মতো আমাদেরও দেশে একটা পরিচিতি হবে। দেশের বাইরেও পরিচিতি হবে।

আমাদের আদিবাসীদের যে সংস্কৃতি ছিল সেগুলো আমরা গানের মাধ্যমে তুলে ধরতে চাই। যদিও আমরা চারজনই গারো ও একজন মারমা। আমরা চাই অন্যান্য যে আদিবাসী গোষ্ঠী আছে প্রত্যেকটা সুর দিয়ে একটা করে গান করি। যে গানে ওদের ভাষা, কৃষ্টি কালচার নিয়ে বলা হয়। লিরিকে এরকম আছে যেখানে তাদের জীবন কি রকম, তাদের উৎসব-এগুলো যে গানে আছে এই গানগুলো আমরা করি। তারপর আবার বাংলায় বলার চেষ্টা করি। আমরা চাচ্ছি যে সবারটা নিয়েই এগিয়ে যাই।

তারা জানান, তাদের গানের এ্যালবাম করার স্বপ্ন আছে। ‘এ্যালবামের স্বপ্ন আমরা আরো একবছর আগে থেকেই দেখছি। সেটার জন্য আমরা কাজও শুরু করেছি। অলরেডি দুইটা গানের কাজ শেষ করেছি।’ বলেন পিংকি।

বিভিন্ন এলাকার মানুষ আপনারা। এক সাথে হলেন কিভাবে এর প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, একজনের মধ্যদিয়ে আরেকজনের সাথে পরিচয়। আমাদের যারা এই গ্রুপটা তৈরী করে দিয়েছেন তাদের মাধ্যমেই ব্যান্ডটা করা হয়েছে। ব্যান্ড মেম্বারদেরর মাধ্যমেই আসছে।
যখন আমরা নতুন চর্চা শুরু করি তখন আমরা চাচ্ছিলাম যে মেয়েগুলো মিউজিক করে তাদেরকে যোগ করে আমাদের প্র্যাকটিসে নিয়ে আসি। খোঁজলাম কে গীটার বাজায়। এরকম করে আস্তে আস্তে প্র্যাকটিসে নিয়ে আসতে আসতে আমরা ৪ জন মিক্সড হয়ে গেলাম।
এফ মাইনরের নিজস্বতার বিষয়ে তারা বলেন, ‘আমাদের অনেকগুলো নিজস্বতা আছে। যেমন একটি আদিবাসী ব্যান্ড দল। আমরা সবাই মেয়ে। বাংলাদেশে আনকমন একটা বিষয়।
সফলতর বিষয়ে বলতে গিয়ে তারা বলেন, পুরস্কার এখনো পাইনি। শুরু করলাম ২০১৭ সাল থেকে। শুরু করার পর স্টেজ শো, টিভি, এফএম রেডিও, লাইভ শোগুলো, দেশের বিভিন্ন জায়গায় স্টেজ শো এই পর্যন্তই।

বড় কোন দলের সাথে স্টেজ পারফম করার বিষয়ে তারা বলেন, বিটিভিতে বাংলাদেশে টপ যারা ব্যান্ড দল আছে তাদের সাথেও পারফর্ম করেছি।
তাদের দেশে বাইরে গিয়েও গান করার পরিকল্পনা রয়েছে। তারা বলেন, আমরা দেশের বাইরে থেকে গান করার প্রস্তাব পাচ্ছি তবে আমরা এখনও সেভাবে প্রস্তুত হয়ে উঠতে পারিনি। ভবিষ্যতে অবশ্যই আমরা দেশের বাইরে গিয়ে গান গাইবো।
নতুন যারা গান গাইতে চান তাদের জন্য পরামর্শ কী? এই প্রশ্নে জবাবে তারা বলেন, তাদের উদ্দেশে কিছু বলতে গেলে এটা বলতে পারি যে গান শিখ আরো শিখ, নিজেকে নিয়ে কিছু কর। উদ্যোগ নিয়ে কিছু কর। আমাদের তো করতে করতে হয়ে গেছে। আর আমরা যদি তাদের কাছে অনুপ্রেরণার মতো কিছু হয়ে থাকি তবে আমাদের কাছ থেকে তারা কিছু শিখুক। আমরা যেটা খারাপ করি সেটা না। ভালো কিছু শিখুক।
গির্জার কোন গান গেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে পিংকি বলেন, ‘ওয়ানগালার সময় একটা গান গেয়েছি। এটা মান্দি ভাষায়।’