শিরোনাম :
আসছেন পোপ ফ্রান্সিস, প্রস্তুত বাংলাদেশ
৩০ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) বিকালে পোপ ফ্রান্সিস বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখবেন বলে জানিয়েছেন তেজগাঁও চার্চের ফাদার কমল কোড়াইয়া।
পোপ ফ্রান্সিসের বাংলাদেশ সফরের চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। রাষ্ট্রীয় এবং বাংলাদেশ খ্রিষ্টমন্ডলীর মধ্যে চলছে প্রস্তুতির আমেজ।
পোপ ফ্রান্সিসের বাংলাদেশ সফর নিয়ে ডিসিনিউজের কথা হয় ফাদার কমলের সাথে। ফাদার কমল পোপ ফ্রান্সিসের বাংলাদেশ সফরে আসা মিডিয়া কমিটির প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন। ডিসিনিউজের সাথে আলাপকালে তিনি তুলে ধরেন পোপ ফ্রান্সিসের সফরের বিষয়ে।
ফাদার কমল জানান, পোপ ফ্রান্সিস বাংলাদেশের মাটিতে পা দেওয়ার পরই তাঁকে রাষ্ট্রীয়ভাবে অভ্যর্থনা জানানো হবে। সেখান থেকে তিনি সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ যাবেন বাংলাদেশের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে। এরপর তিনি বঙ্গবন্ধুর বাসভবন ধানমন্ডী ৩২ নম্বর যাবেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাতে। একই দিন তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের সাথে বঙ্গভবনে সাক্ষাৎ করবেন।
‘পোপ ফ্রান্সিসের সফরের দ্বিতীয় দিন সকালে কাথলিক খ্রিষ্টবিশ্বাসীদের জন্য তিনি মহাখ্রিষ্টযাগ উৎসর্গ করবেন এবং একই সাথে ১৬ জন ডিকনকে যাজকাভিষিক্ত করবেন। ধারণা করা হচ্ছে এই খ্রিষ্টযাগে প্রায় ১ লক্ষ ৩০ হাজারের বেশি খ্রিষ্টভক্ত যোগ দিবেন’ জানান ফাদার কমল।
দ্বিতীয় দিন বিকালে পোপ ফ্রান্সিসকে দেওয়া হবে গণসংবর্ধনা, যেখানে উপস্থিত থাকবেন বিভিন্ন ধর্মের উচ্চ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ। যা বাংলাদেশের একটি বড় ধরণের সম্প্রীতির উদাহরণ হিসেবে দেখছেন ফাদার কমল।
সফরের তৃতীয় দিনের বিষয়ে তিনি জানান, এ দিন পোপ ফ্রান্সিস বাংলাদেশের ফাদার, সিষ্টার এবং ব্রাদারদের সাথে সাক্ষাৎ করবেন। এ ছাড়াও তিনি প্রতিবন্ধী ভাইবোনদের সাথেও বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে সাক্ষাৎ করবেন। পোপ ফ্রান্সিস সবিশেষ গুরুত্ব দিয়ে একটি যুব সমাবেশেও অংশ নিবেন এ দিন।
ফাদার কমল জানান, পোপ ফ্রান্সিসের যেমন থাকবে রাষ্ট্রীয়ভাবে কঠোর নিরাপত্তা, তেমনি গুরুত্ব থাকবে মান্ডলিক দিকও।
ডিসিনিউজকে তিনি জানান, পোপ ফ্রান্সিসের সফরসঙ্গী হয়ে ৭০-৭২ জন সংবাদকর্মী থাকবেন। এ ছাড়াও ৫ শতর বেশি বিদেশী সংবাদকর্মী তাঁর সফরকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে অবস্থান করবেন।
পোপ ফ্রান্সিসের কর্মসূচীতে কিভাবে জন সাধারণ অংশগ্রহণ করতে পারবে সেই বিষয়ে ফাদার কমল জানান, ইতোমধ্যে আমরা সকল ধর্মপল্লীতে রেজিষ্ট্রেশনের ঘোষণা দিয়েছি। যারা কোনো ধর্মপল্লীতে ৬ মাস ধরে রয়েছে, তারা সেই ধর্মপল্লী থেকে নাম রেজিষ্ট্রেশন করবে এবং পরবর্তীতে ভেরিফিকেশনের মাধ্যমে তাদের প্রবেশ পত্র প্রদান করা হবে। তবে নিরাপত্তা এবং সর্বোচ্চ মানুষের অংশগ্রহণের জন্য প্রতিজন যেকোনো একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারবে। এ ছাড়াও কোথায়, কখন, কি অনুষ্ঠান হবে, তার তথ্য পরে জানিয়ে দেওয়া হবে।
পোপ ফ্রান্সিসের আগমনে বাংলাদেশে একটি ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে ধারণা করছেন তিনি। তিনি বলেন, পোপের আগমনে বাংলাদেশের ধর্মীয় রীতিনীতি এবং শান্তি ও সম্প্রীতি বৃদ্ধি পাবে। তার সফরের ফলে বিশেষ করে বাংলাদেশের অবস্থান ব্যাপকভাবে প্রচারিত হবে। এতে দেশের সুনাম বাড়বে।
পোপ ফ্রান্সিসের বাংলাদেশ সফরকে মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ নেতারাও প্রশংসা এবং গৌরবের উল্লেখ করেছে বলে জানান ফাদার কমল। তিনি বলেন, অন্য ধর্মের মানুষরাও পোপ ফ্রান্সিসের আগমনকে অনেক বেশি ইতিবাচক এবং গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন। তাই শুধু খ্রিষ্টমন্ডলী নয়, অন্য ধর্মের লোকেরাও তার সফরকে ফলপ্রসূ করতে এগিয়ে এসেছে, এমনকি অর্থনৈতিক বিষয়েও তাদের সচেতনতা দেখা গেছে। বাংলাদেশের নাগরিক সবাই এ বিষয়ে সহযোগিতা করছে।
বাংলাদেশে পোপের আগমন শুধু খ্রিষ্টানদের নয়, এটা বাংলাদেশের জন্য একটা আনন্দ হিসেবে দেখছেন ফাদার কমল। বাংলাদেশের অবস্থান যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা পোপ ফ্রান্সিসের সফরের মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছে। খ্রিষ্টানরা বাংলাদেশে অল্প হলেও দেশ ও জাতির জন্য তাদের ভূমিকা কতটা গুরত্বপূর্ণ এটাও তার প্রমাণ হিসেবে দেখছেন তিনি।
‘পোপ ফ্রান্সিস সব সময় ন্যায়, সত্য এবং মানবতার পক্ষে কথা বলেন’ উল্লেখ করেন ফাদার কমল।
আরবি/আরপি/৪ অক্টোবর, ২০১৭