শিরোনাম :
কানাডার চিঠি
ভ্রমণ ও পরিবেশ
১১/১০/২০১৯
রিজাইনা
সাসকাচ্যুয়ান
কানাডা
প্রিয় পাঠক,
আন্তরিক শুভেচ্ছা!
এটাই আমার কানাডায় প্রথম আসা। আমার প্রিয় বাংলাদেশ থেকে পরিবেশগত পার্থক্য বিশেষভাবে লক্ষণীয়।
প্রাকৃতিক পরিবেশ, সামাজিক পরিবেশ, রাজনৈতিক পরিবেশ, রাস্তাঘাটের পরিবেশসহ নানা ধরনের পরিবেশ আমার দৃষ্টিকে আর অনুভূতিকে প্রভাবিত করেছে।
শতকরা শতভাগ শিক্ষিত হওয়াতে এখানে প্রতিটি পরিবেশ মানুষের সর্বোচ্চ মঙ্গলের কথা চিন্তা করে গড়ে তোলা হয়। কেননা অধিকাংশ পরিবেশ মানুষ সৃষ্টি করে। একমাত্র প্রকৃতির সৃষ্ট পরিবেশ সৃষ্টির ব্যপারে মানুষের প্রভাব সৃষ্টির ক্ষমতা নেই। তবে ডিজিটাল যুগে নানাভাবে প্রকৃতির পরিবেশের ওপরেও মানুষ নানাভাবে প্রভাব সৃষ্টি করে চলেছে।
টরোন্টোভিত্তিক অভিবাসী বাংলাদেশীদের বসবাস। দেশটি নাকি ৪০-৫০টি বাংলাদেশের সমান। আয়তনের দিক থেকে বিশাল এই দেশ। তবে আমার দু-মেয়ের বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশোনার সুবাদে কানাডার উত্তরে সাসকাচ্যুয়ান রাজ্যের রিজাইনা শহরে আসি, অক্টোবরের ১ তারিখে। ঢাকা থেকে অর্থাৎ বাসা থেকে ১ তারিখে বেরিয়ে আসলেও ওইদিন রাত ১২টা ৫০ মিনিট চায়না সাউদার্ন এয়ার লাইন্সের ফ্লাইটটি উড্ডয়ন করে। চায়না হোয়াংকো বন্দর ৬ঘন্টা বিরতির পর স্থানীয় সময় বিকেল ২টায় ড্যানকুভারের উদ্দেশ্যে রওনা হই। সারারাত অর্থাৎ পূর্ণ ১১ ঘন্টা আকাশে উড্ডয়নের পর ২ অক্টোবর সকাল ১১ টায় ড্যানকুভার বন্দরে অবতরণ করে। এখানে ৩ ঘন্টা অবস্থানের পর স্থানীয় সময় বিকেল ২ টায় রওনা দিয়ে সন্ধ্যা ৫টায় রিজাইনা শহরের বন্দওে অবতরণ করে। ফুল নিয়ে আমার দুই মেয়ে, বড় মেয়ের জামাই ও নয় মাসের নাতনি আমাকে বরণ করার জন্য আগে থেকেই অপেক্ষা করছিল। দীর্ঘ তিন বছর পর ওদের দেখে আমি আবেগাপ্লুত হয়েছি। তিন বছর আগে হযরত শাহজালাল বিমান বন্দরে মেয়েকে বিদায়ের সময় যে অশ্রু বাধ মানেনি তারই ধারা আনন্দঅশ্রু হিসাবে আবারো দেখা দিল আমার দু’চোখ ভরে। জড়িয়ে ধরে দু’জনকেই চুমু দিলাম। বুকের ভেতর অদৃশ্য চাপা পড়া পাথরটি মনে হয় একটু সরে গেল। হালকা অনুভব করলাম।
পরিবেশের কথা বলছিলাম। ভ্রমণের সময় আমার প্রিয় মাতৃভূমির পরিবেশের তুলনামূলক চিত্র বারবার আমার অনুভূতিতে নাড়া দিচ্ছিল। ভাড়া করা মাইক্রো গাড়িতে মাত্র ১৫-২০ মিনিটের পথ। বেসমেন্টসহ তিনতলা বাসায় ওরা থাকে। আসার পথে পরিপার্শিকতা লক্ষ্য করছিলাম। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ছিমছাম রাস্তাঘাট, বাড়ি আর গাছ-গাছরা। প্রচন্ড ঠান্ডা অনুভব করছিলাম। জেকেট পরে নিলাম। ওদের ঘরে ঢুকতেই কুসুম গরম অনুভব করলাম। বুঝলাম শীত থেকে রক্ষার বিদ্যুতের হিটার রয়েছে ঘরে।
ঢাকার পূর্বরাজাবাজারের গলির মাথায় অর্থাৎ ইন্দিরা রোডের মাথায় আসলে যে দুর্গন্ধ অনুভব করে থাকি, এই শহরে তার রেশমাত্র নেই। ময়লা নেই, ধুলাবালি নেই। শুধু অক্টোবরেই নয়, সারা বছর জুড়েই শহর এমন পরিচ্ছন্ন থাকে। তরিতরকারির ময়লা, মাছ-মাংসের ময়লা, কুটাকাটির ময়লা কীভাবে কোথায় যায়, তাও মনে হয় বোঝা যায় না। প্রতিটি ঘরের কাচের জানালাগুলো স্থায়ীভাবে আটকানো। বাইরের মুক্ত বাতাস ঘরে প্রবেশের যতসামান্যই সুবিধা আছে। এত ঠান্ডা বাতাস কারো কাম্য নয়।
বছরের নয় মাসই প্রচন্ড শীতে কাটাতে হয় এই শহরবাসীদের। স্থানীয় সাদা মানুষগুলো অত্যন্ত ভদ্র। আবাসিক এলাকায় মানুষের চলাচল অত্যন্ত কম। মাত্র সুপার মার্কেট অঞ্চলে গাড়ি ও বাসের আনাগোণা। অধিকাংশ মানুষ তাদের গাড়িতে চলাফেরা করে। অযাচিত ও অপরিকল্পিত কোন স্থাপনা বা বাড়িঘর নেই। রাস্তাঘাট সুপরিকল্পিত। সবকিছুতেই যেন একটি পরিমিত মাত্রার উপস্থিতি। নানা দেশের মানুষ অভিবাসী হয়ে বা লেখাপড়ার তাগিদে এই শহরে অবস্থান। তাদের প্রতি স্থানীয়দের দৃষ্টিভঙ্গি অতি ইতিবাচক।
এ দেশের মানুষ ঠকবাজি আর চালাকি যেন বোঝেই না। অযাচিত সুযোগ-সুবিধা আদায় করার প্রবণতা যেন কারোই নেই। নিয়ম ও আইন যেন সবার জন্য সমান। অনেক আগে নব্বইয়ের দশকে আগত একজন বাঙ্গালি বন্ধুর সাথে আলাপে জানলাম এই দেশে কমবেশী ১ লক্ষ বাঙ্গালির বসবাস। তার মধ্যে বিরাট অংশ খ্রিষ্টান। তারা সবাই লেখাপড়া ও আর্থিক উন্নয়নে স্থানীয় সাদাদের চেয়ে অগ্রগণ্য। কারণগুলো বিস্তারিত পরবর্তী চিঠিতে থাকবে।
শুভ কামনায়,
রাফায়েল পালমা
সংবাদকর্মী