ঢাকা ,
বার : রবিবার
তারিখ : ২২ ডিসেম্বর ২০২৪
বাংলা : ৮ পৌষ ১৪৩১
Dcnewsbd Facebook
Dcnewsbd Twitter

শিরোনাম :

প্রথম পাতা প্রবন্ধ খ্রীষ্টের পুনরুত্থান এক সুনিশ্চিত সত্য

খ্রীষ্টের পুনরুত্থান এক সুনিশ্চিত সত্য

0
665

ফাদার মাইকেল মিলন দেউরী ।। ম্যানিলা (ফিলিপাইন)

প্রভু যীশু কালের পূর্ণতায় মানুষ হয়েছেন। “পরমেশ্বর জগতকে এতই ভালবেসেছেন যে, তাঁর একমাত্র পুত্রকে তিনি দাস ক’রে দিয়েছেন, যাতে, যেে কই তাঁকে বিশ্বাস করে, তার যেন বিনাশ না হয়, বরং সে যেন লাভ করে শাশ্বত জীবন।

পরশেম্বর জগতকে দন্ডিত করতে তাঁর পুত্রকে এই জগতে পাঠাননি ; পাঠিয়েছেন, যাতে তাঁর দ্বার জগৎ পরিত্রাণ লাভ করে” যোহন ৩ :১৬-১৭)। ঈশ্বর পুত্র যীশুর যাতনা ভোগ, মৃত্যু ও পুনরুত্থানের (পাস্কা রহস্য) মধ্য দিইে ঈশ্বরের মুক্তি পরিকল্পনার বাস্তবায়ন হয়েছে। খ্রীষ্টের পুনরুত্থান অতীব বাস্তব ও সনিশ্চিত সত্য।

মানব যীশুর বাধ্যতাই অবাধ্য মানবের পরিত্রাণ সাধিত হয়েছে। “তিনি ঈশ্বর হওয়া সত্তে¡য় ঈশ্বরের সমতুল্যতাকে আঁকড়ে থাকতে চাইলেন না। আকাড়ে প্রকাড়ে মানুষের মত, দাস হয়ে জন্ম গ্রহণ করলেন। ঈশ্বর হয়েও বাধ্য থাকলেন; ক্রুশ মৃত্যু মেনে নিলেন। সাধন করলেন মানুষের পরিত্রাণ। সবাইকে সম্মিলিত করলেন” (দ্র: ফিলিপ্পীয় ২:৬-১১)। শাস্ত্রানুসারে; “পাপের প্রায়শ্চিত্ত করার জন্যে খ্রীষ্ট মৃত্যু বরণ করেছেন, তাঁকে সমাধিও দেওয়া হয়েছিল, তিনি তৃতীয় দিবসে মৃতদের মধ্যে থেকে পুনরুত্থিত হয়েছেন। অনেককে তিনি দেখা দিয়েছেন” (দ্র: ১ম করি. ১৫:৩-৮)। যীশুর ক্রুশে প্রাণ উৎসর্গ ও মৃত্যুই মানবের চিরমুক্তি।

তিনি ঈশ্বর, আদিতে যিনি ছিলেন ; বানীই ছিলেন ঈশ্বর ! বাণী মানব রূপে মানবের মাঝে প্রকাশিক (দ্র : যোহন ১ :১-২;১৪)। তিনি সেই বাণী যার দ্বারা সমস্ত কছিুই সৃষ্টি হয়েছে। তিনি ঐশ প্রত্যাদেশ/উরারহব জবাবষধঃরড়হ; প্রকাশিত সত্য/জবাবধষবফ ঞৎঁঃয। তিনি, খ্রীষ্ট যীশু যার মধ্য দিয়ে আমরা লাভ করেছি অনুগ্রহ আর অনুগ্রহ (দ্র : যোহন ১:১৬)। শুন্য সমাধিগুহা ও স্বর্গদুতদের দর্শন (দ্র: মথি ২৮:১-৮; মার্ক ১৬:১-৮; লুক ২৪:১-১২; যোহন ২০:১-১০) বিভিন্ন ব্যক্তিদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ (১ম করি. ১৫:৫-১১) প্রমান করে তিনি সত্যিই পুনরুত্থান করেছেন। যার মধ্যে বিরাজিত সর্ব শক্তিমান ঈশ্বরের মহিমা। পুনরুত্থিত খ্রীষ্টকে কেন্দ্র করেই জগতের মাঝে খ্রীষ্টবিশ্বাস প্রতিষ্ঠিত।

মুক্তিদাতা যীশু খ্রীষ্ট জগতে থাকতে যে বাণী দিয়েছেন তার পূর্ণতা পায় তাঁর (খ্রীষ্ট) কার্যক্রমে জীবন দানের মধ্য দিয়ে। তিনি বলেন; “বন্ধুদের জন্যে প্রাণ দেওয়ার চেয়ে বড় ভালবাসা মানুষের আর কিছুই নেই” (যোহন ১৫:১৩)। তাঁর এই কথার পূর্ণতা জগতে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা, সুস্থ্যতা ও জীবন দানের মধ্য দিয়ে। “মানবপুত্র তো সেবা পাবার জন্যে আসেনি; সে এসেছে সেবা করতে এবং বহু মানুষের মুক্তিপণ হিসাবে নিজের প্রাণ বিসর্জন দিতে” (মার্ক ১০:৪৫)। কথা নয় কাজেই প্রমান হল মানব পরিত্রাণে নিজ জীবন উৎসর্গ। সত্য হল এই বাণী; “আকাশ ও পৃথিবী লোপ পাবে, কিন্তু আমার কথা কখনো লোপ পাবে না” (মথি ২৪:৩৫)।

যীশু বলেন, “আমিই পথ, আমিই সত্য, আমিই জীবন” (যোহন ১৪ :৬ক)। তিনি দেখিয়েছেন কিভাবে সত্যকে প্রকাশ প্রচার ও প্রতিষ্ঠা করতে হয়। তিনি দেখিয়েছেন প্রতিষ্ঠিত সত্য পথে চলে মানুষ জীবন পায়। তিনি জীবন; যে জীবনে আছে পূর্ণতা। “আমিই জীবন, আমিই পুনরুত্থান। কেউ যদি আমার ওপর বিশ্বাস রাখে, তবে সে মারা গেলেও জীবতই থাকবে” (যোহন ১১:২৫)। এইসব ঘটনা প্রমান করে খ্রীষ্টের পুনরুত্থান এক সুনিশ্চিত সত্য; যা খ্রীষ্টবিশ্বাসীদের জীবনে প্রবাহমান।

প্রায়শ্চিত্ত/তপস্যা/উপবাস কালের সমাপ্তিতেই তো নিস্তার উৎসব ও পুনরুত্থান উৎসব। উপবাস কালের আহবান হল : প্রায়শ্চিত্ত করে আত্মশুদ্ধির মধ্য দিয়ে নিস্তার উৎসব ও পুনরুত্থানের প্রস্তুতি। আত্মশুদ্ধির জন্যে আমরা প্রার্থনা, উপবাস ও ত্যাগস্বীকারের দান করব। বাস্তবতায় আমার মূখে উচ্চারিত প্রার্থনা, উপবাস ও ভিক্ষাদান আমার মনের পরিবর্তন ঘটিয়ে অন্যের সাথে মিলন না ঘটায়? নতুন প্রেরণঅয় নব আনন্দে জেগে না উঠি ? তাহলে আমার প্রার্থনা, উপবাস ও দয়াদান/ভিক্ষাদান বৃথা লোক দেখান। নিস্তার ও পুনরুত্থান উৎসব নিছক একটা অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠান প্রভু যীশুর মৃত্যু পুনরুত্থানের স্মরণ অনুষ্ঠান ও বিশ্বাসের অনুষ্ঠান হবে না। আমরা পুনরুত্থান উৎসবে পরিত্রাণের মহান রহস্য ধ্যান করি । সেই জন্যই তো খ্রীষ্টবিশ্বাসীরা উপবাস/তপস্যা/প্রায়শ্চিত্তকালে ধ্যান-প্রার্থনা. উপবাস ও দয়াদানের ত্রিবিধ সাধনার কাজে নিরত থাকে; যাতে করে মনের সকল কলুষতা থেকে মুক্ত হয়ে মহান নিস্তার উৎসব (পরিত্রাণ দায়ী উৎসব/পাস্কা পর্ব) পালনের যোগ্য হয়ে উঠে।

পুনরুত্থান উৎসব মানে নয় খ্রীষ্ট যীশু প্রতি বছর যাতনাভোগ করে মৃত্যুবরণ করেন ও তৃতীয় দিবসে পুনরুত্থাণ করেন। আসলে তা নয়। পুনরুত্থান যীশু খ্রীষ্টের মানবজাতির জন্যে আত্মদানের স্মরণানুষ্ঠান। ঈশ্বরে-মানুষে ও মানুষে-মানুষে মিলন ঘটাতে পুত্র যীশু খ্রীষ্ট যে মিলন যজ্ঞ নিবেদন করেছে। খ্রীষ্ট বলেন; “বলি ও অর্ঘ্য, পূর্ণ অহুতি ও পাপের প্রায়শ্চিত্ত বলি তুমি তো চাওনি….; দেখ, এই তো তোমার ইচ্ছা পূর্ণ করতে এই তো এসেছে আমি। এইভাবে পুরাতন রীতি বাতিল করে যীশুখ্রীষ্টের দেহ সেই একবার চিরকালেন মতো উৎসর্গ হওয়ার ফলেই আমরা যে পবিত্র হয়ে উঠেছি, তা ঘটেছে পরমেশ্বরের ইচ্ছাতেই” (হিব্রæ ১০:৭-১১)। আমরা পেয়েছি পরিত্রাণ । “খ্রীষ্ট কিন্তু পাপের প্রায়শ্চিত্তরূপে একটিমাত্র বলি চিরকালেন মতোই উৎসর্গ করে গেছেন” (হিব্রæ ১০:১২)। তিনিই সেই নিস্তার মেষ। বিশ্বপাপহর ! যিনি বিশ্বের পাপরাশি মোছনের জন্যে বলিকৃত হয়েছেন। মৃত্যু বরণ করে মৃত্যুকে জয় করে পুনরুত্থিত হয়েছেন। আমাদের দিয়েছেন নবজীবন !

মুক্তিদাতা যীশু খ্রীষ্টের জগতে প্রবেশ কালের এক বিশেষ পূর্ণতা ও ঘটনা। তিনি (যীশু খ্রীষ্ট) ঐশ প্রত্যাদেশ/উরারহব জবাবষধঃরড়হ; প্রকাশিত সত্য/জবাবধষবফ ঞৎঁঃয। তিনি, খ্রীষ্ট যীশু যার মধ্য দিয়ে আমরা লাভ করেছি অনুগ্রহ আর অনুগ্রহ (দ্র : যোহন ১:১৬)। ঈশ্বর তাঁর ভালবাসার চরম প্রমান দিলেন নিজ পুত্রদানে। ঈশ্বর পুত্র খ্রীষ্ট যীশু তাঁর জীবনোৎসর্গের মধ্য দিয়ে পিতার বাধ্যতার প্রমান দিয়ে ক্রুশমৃত্যু মেনে নিলেন এবং মানব জাতির জন্যে আনলেন চিরকালীন মুক্তি। খ্রীষ্টের পুনরুত্থান আমাদের জীবনে পরির্তনের আহবান। জীবনে নতুন করে বাঁচার ও নব আনন্দ এগিয়ে যাওয়ার উৎসব। উৎসবের তাৎপর্যই বলে দেয়; খ্রীষ্টের পুনরুত্থান এক সুনিশ্চিত সত্য।