শিরোনাম :
মুুক্তিদাতার জন্মদিন
আলবার্ট এ. গোলদার
মারীয়ার কাছে দূত সংবাদ- ‘আদিতে বাক্য ছিলেন, বাক্য ঈশ্বরের কাছে ছিলেন, বাক্য ঈশ্বর ছিলেন। আর সেই বাক্য মাংসে মূর্তিমান হলেন।’
ঈশ্বরের ব্যক্তিত্ব খ্রিষ্টে প্রকাশিত- জগতের দীপ্তি খ্রিষ্ট তাঁর ঈশ্বরত্বের অত্যুজ্জ্বল প্রতাপ আচ্ছাদন করে একজন মানব রূপে মনুষ্যদের মধ্যে বসবাস করলেন, যেন তারা বিনষ্ট না হয়ে তাদের স্রষ্টার সঙ্গে পরিচিত হতে পারেন যেহেতু পাপ মানব জাতি এবং তার নির্মাতার মধ্যে বিচ্ছেদ আনয়ন করেছিল, এই কারণ কোনো ব্যক্তি, কখনও ঈশ্বরকে দেখেনি, তাই তিনি খ্রিষ্টের মাধ্যমে প্রকাশিত হলেন। দূত তাঁকে বললেন, ‘ভয় করো না, মারীয়া; তুমি তো ঈশ্বরের কাছে অনুগ্রহ পেয়েছ। দেখ, গর্ভধারণ করে তুমি একটি পুত্রসন্তান প্রসব করবে, ও তার নাম যিশু রাখবে।’ মারীয়া দূতকে বললেন, ‘এ কেমন করে হতে পারবে, যখন আমি কোনো পুরুষকে জানি না?’ উত্তরে দূত তাঁকে বললেন, ‘পবিত্র আত্মা তোমার উপরে নেমে আসবেন, এবং পরাৎপরের পরাক্রম তোমার উপর নিজের ছায়া বিস্তার করবে; আর এজন্য যাঁর জন্ম হবে, তিনি পবিত্র হবেন ও ঈশ^রের পুত্র বলে অভিহিত হবেন।’
মারীয়া বললেন, ‘এই যে ! আমি প্রভুর দাসী; আপনি যা বলেছেন, আমার তা-ই হোক।’ তখন দূত তাঁর কাছ থেকে বিদায় নিলেন। হে ঈশ্বর, তোমার দয়া কেমন বহুমূল্য! মনুষ্য সন্তানবর্গ তোমার পক্ষছায়ার নিচে শরণ লয়। যোসেফের কাছে দূত সংবাদ- ‘দাউদসন্তান যোসেফ, তোমার স্ত্রী মারীয়াকে গ্রহণ করে নিতে ভয় করো না, কেননা তার গর্ভে যা জন্মেছে, তা পবিত্র আত্মার প্রভাবেই হয়েছে; সে একটি পুত্রসন্তান প্রসব করবে আর তুমি তাঁর নাম যিশু রাখবে, কারণ তিনিই নিজ জনগণকে তাদের পাপ থেকে ত্রাণ করবেন।’ যোসেফ ঘুম থেকে জেগে উঠে, প্রভুর দূত তাঁকে যেমন আদেশ দিয়েছিলেন, সেইমতো করলেন: তিনি নিজ স্ত্রীকে গ্রহণ করে নিলেন। ইনি পুত্র প্রসব করার আগে তাঁর সঙ্গে যোসেফের কখনও মিলন হয়নি; তিনি তাঁর নাম যিশু রাখলেন। সদাপ্রভুর নিকট নীরব হও, তাঁর অপেক্ষায় থাক। যোসেফ ও তাঁর বাগদত্তা স্ত্রী মারীয়াকে সঙ্গে নিয়ে নাম লেখাবার জন্য নিজ শহরে বেথলেহেমে গেলেন। তখন এমন ঘটল যে তাঁরা সেখানে থাকতেই মারীয়ার প্রসবকাল পূর্ণ হল। আর তিনি নিজে প্রথমজাত পুত্র প্রসব করলেন। কাপড়ে জড়িয়ে তিনি তাঁকে একটা যাবপাত্রে শুইয়ে রাখলেন, কারণ পান্থশালায় তাঁদের জন্য স্থান ছিল না।
রাখালদের কাছে দূত সংবাদ- ‘আজ দাউদ-নগরীতে তোমাদের জন্য এক ত্রাণকর্তা জন্মেছেন-তিনি খ্রিষ্ট প্রভু। তোমাদের জন্য চিহ্ন এ, তোমরা কাপড়ে জড়ানো ও যাবপাত্রে শোয়ানো একটি শিশুকে দেখতে পাবে।’ ‘উর্ধ্বলোকে ঈশ্বরের গৌরব, ইহলোকে তাঁর প্রসন্নতার পাত্র মানুষের জন্য শান্তি!’ তাই তারা ইতস্তত না করেই গিয়ে মারীয়া ও যোসেফ ও যাবপাত্রে শোয়ানো শিশুটিকে খুঁজে পেল। আর রাখালদের যেভাবে বলা হয়েছিল, তারা সেভাবে সবই দেখতে ও শুনতে পেল বিধায় ঈশ্বরের গৌরবকীর্তন ও তাঁর প্রশংসাবাদ করতে করতে ফিরে গেল। আমার কাছে একটি বাক্য গোপনে পৌঁছিল, আমার কর্ণ কুহরে তার ঈষৎ শব্দ আসল।
‘হে মহাপ্রভু, তোমার কথামতো এখন তোমার এই দাসকে শান্তিতে বিদায় দাও ; কারণ আমার চোখ দেখেছে সেই পরিত্রাণ যা তুমি প্রস্তুত করেছ সকল জাতির সামনে।’
যখন বালকটির পরিচ্ছেদনের জন্য আট দিন পূর্ণ হল, তখন তাঁর নাম যিশু রাখা হল, ঠিক যেভাবে তাঁর গর্ভাগমনের আগে দূত দ্বারা রাখা হয়েছিল। পন্ডিতদের আগমন- জ্যোতিষ্কটা দেখতে পেয়ে পূর্বদেশীয় তিন পন্ডিত মহা আনন্দে অতিশয় আনন্দিত হলেন; এবং ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে শিশুটিকে তাঁর মা মারীয়ার সঙ্গে দেখতে পেলেন; তখন ভূমিষ্ঠ হয়ে তাঁর সামনে প্রণিপাত করলেন; পরে নিজেদের রত্নপেটিকা খুলে তাঁকে উপহার দিলেন- সোনা, ধুপধুনো ও গন্ধনির্যাস। আমাদের ঈশ্বর শৈল, তাঁর কর্ম সিদ্ধ, কেননা তাঁর সমস্ত পথ ন্যায্য; তিনি বিশ্বাস্য ঈশ্বর, তাঁহাতে অন্যায় নাই; তিনি ধর্মময় ও সরল। প্রথম সাক্ষী- এলিজাবেথ উচ্চকন্ঠে বলে উঠলেন, ‘নারীকুলে তুমি ধন্য, এবং ধন্য তোমার গর্ভফল। আমি কে যে আমার প্রভুর মা আমার কাছে আসবে? দেখ, তোমার অভিবাদন আমার কানে ধ্বনিত হওয়া মাত্র শিশুটি আমার গর্ভে (৬ষ্ঠ মাস) আনন্দে লাফিয়ে উঠল।
মারীয়া তাঁর সঙ্গে প্রায় তিন মাস থাকলেন, পরে বাড়ি ফিরে গেলেন। দ্বিতীয় সাক্ষী- সে সময়ে যেরুসালেমে সিমিয়োন নামে একজন ছিলেন। যিনি ধার্মিক ও ভক্তপ্রাণ ব্যক্তি ছিলেন; তিনি ইস্রায়েলের সান্ত্বনার প্রতিক্ষায় থাকতেন, ও পবিত্র আত্মা তাঁর উপরে ছিলেন। পবিত্র আত্মা তাঁকে এ কথা জানিয়েছিলেন যে, প্রভুর সেই খ্রিষ্টকে না দেখা পর্যন্ত তিনি মৃত্যু দেখবেন না। সেই আত্মার আবেশে তিনি মন্দিরে এলেন, এবং যিশুর পিতামাতা যখন বিধানের নিয়ম-বিধি সম্পাদন করার জন্য শিশুটিকে ভিতরে নিয়ে আসছিলেন, তখন তিনি তাঁকে কোলে নিলেন, ও ঈশ্বরের স্তুতিবাদ করে বলে উঠলেন: ‘হে মহাপ্রভু, তোমার কথামতো এখন তোমার এই দাসকে শান্তিতে বিদায় দাও ; কারণ আমার চোখ দেখেছে সেই পরিত্রাণ যা তুমি প্রস্তুত করেছ সকল জাতির সামনে।’ তৃতীয় সাক্ষী- আন্না নামে এক নারী-নবীও ছিলেন; তিনি আসের গোষ্ঠীর ফানুয়েলের কন্যা। তাঁর অনেক বয়স হয়েছিল; কুমারী অবস্থার পর সাত বছর স্বামীর ঘর করেন, তিনি বিধবা হয়েছিলেন; এখন তাঁর বয়স চুরাশি বছর হয়েছে।
তিনি মন্দির থেকে কখনও দূরে না গিয়ে উপবাস ও প্রার্থনায় রত থেকে রাত-দিন উপাসনা করে চলতেন। সেই ক্ষণে এসে উপস্থিত হয়ে তিনিও ঈশ্বরের বন্দনা করতে লাগলেন। যিশু যেহেতু সর্ব দরিদ্র অবস্থায় যাবপাত্রে জন্মগ্রহণ করেন, ঈশ্বর চান প্রতিজন খ্রিষ্টভক্ত যেন সকল অবস্থানে, অবস্থায় ঈশ্বরের ইচ্ছা অনুসরণ করে চলে। মারীয়া এবং যোসেফ উভয়েই ঈশ্বরের ইচ্ছা পূরণ করেছেন। ঈশ^র চান প্রত্যেক তরুণ/তরুণী, বিবাহিত/অবিবাহিত, প্রবীণ, বৃদ্ধ/বৃদ্ধা ঈশ^রের ইচ্ছায় পবিত্র আত্মার শক্তিতে জীবন-যাপন করে। মনে রাখতে হবে ‘অনন্ত জীবনের’ প্রতিজ্ঞা আমাদের জন্য যথেষ্ট। না’ই বা পেলাম সুনাম, যশ, ধন-সম্পদ। মৃত্যুর পরে পুনরুত্থানের নিশ্চয়তা, স্বর্গে বাস করার নিশ্চয়তা এ’ই যথেষ্ট। পরমেশ্বর যাকে ধনসম্পত্তি দেন, তা ভোগ করার, তার নিজের অংশ নেওয়ার, ও নিজের পরিশ্রমের ফল ভোগ করার অধিকারও তাকে দেন; এও পরমেশ্বরের দান; তখন মানুষ নিজের পরমায়ুর চিন্তায় তত বসে থাকবে না, কারণ পরমেশ্বর তার হৃদয়ের আনন্দেই তাকে ব্যস্ত রাখেন।