শিরোনাম :
সাধারণকালের ত্রয়োদশ রোববারের উপদেশ
|| কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিও, সিএসসি ||
উপস্থিত পরম শ্রদ্ধেয় বিশপগণ, যাজকগণ, সন্ন্যাব্রতী ব্রাদার ও সিস্টার এবং জনমণ্ডলীর খ্রিষ্টভক্তগণ, চল্লিশ দিন অসুস্থতার পর, আজ, আপনাদের সাথে একাত্ম হয়ে এই খ্রিষ্টযাগে পৌরহিত্য করার সুযোগ পেয়েছি, তার জন্য আমি অত্যন্ত আনন্দিত ও কৃতজ্ঞ। ঈশ্বরকে তাঁর দয়া ও সুস্থতার দানের জন্য প্রশংসা করি; এই অসুস্থতার সময়ে, আপনারা প্রার্থনা, ভালবাসা, শুভেচ্ছা ও সমর্থন নিয়ে আমার পাশে ছিলেন তার জন্য আমি আপনাদের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞ।
আজকের মঙ্গলসমাচারে যিশু বলেন: “যে তোমাকে গ্রহণ করে, সে আমাকে গ্রহণ করে এবং যে আমাকে গ্রহণ করে, আমাকে যিনি পাঠিয়েছেন তাকে সে গ্রহণ করে।” যীশুর এই কথাগুলো বর্তমান ভাইরাসে আক্রান্ত মহাদুর্যোগ কালে আমাদের জন্য বিশেষ অর্থপূর্ণ।
প্রথম শাস্ত্রপাঠে আমরা শুনেছি, শুনেম নামক অঞ্চলের একজন ধনী মহিলা, একজন অচেনা ব্যক্তি, ইশ্বরের সেবক প্রবক্তা এলিয়কে অনেক পীড়াপীড়ি করে, তাকে ঘরে আমন্ত্রণ জানালেন; তার তাঁকে বাড়িতে আশ্রয় দিলেন; রাতে থাকার ব্যবস্থা করে দিলেন। প্রবক্তা এলিয়ের মধ্য দিয়ে ঈশ্বরই নিজে এই শুনামীয় মহিলার কাছে আসলেন; নিঃসন্তান মহিলা লাভ করল একটি বড়ো আশীর্বাদ। প্রবক্তা এলিয় তাকে বললেন: “জেনে রাখুন, আগামী বছর ঠিক এই সময়ে আপনি নিজের ছেলেকে কোলে নিয়ে আদর করতে পারবে।” অন্যকে আদর করে গ্রহণ করার ফলে একটি পুত্র সন্তান লাভ করা। কতো বড়ো আশীর্বাদ।
মঙ্গলসমাচার পাঠে আমরা শুনলাম যিশুর উক্তি: “যে তোমাকে গ্রহণ করে, সে আমাকে গ্রহণ করে এবং যে আমাকে গ্রহণ করে, আমাকে যিনি পাঠিয়েছেন তাকে সে গ্রহণ করে।”
প্রিয়জনেরা, বর্তমান করোনার মহামারি দুর্যোগে, কত মানুষ অন্যের দ্বারা নিগৃহীত হচ্ছে সেকথা আমরা কত ঘটনা কতবার শুনেছি। অনেক সময় করোনায় আক্রান্ত লোকেরা বাড়িতে স্থান পাচ্ছে না; তার আপনজনেরা তাকে ভয়ে প্রত্যাখ্যান করছে; জীবনে অন্তিম মুহূর্তে একাকী সব কষ্ট গ্রহণ করছে, অতি আপনজনেরা পাশে নেই; মৃত্যুর সময় একা একা চলে যেতে হচ্ছে; কী মর্মান্তিক একটা বেতনার মুহূর্ত!
কত শতসহস্র সাধারণ রোগী ও তার আত্মীয়স্বজন, রোগ নির্ধারণের জন্য সহায়তা পাচ্ছে না; স্বাস্থ্যসেবা ও হাসপাতালে ঢুকতে পারছে না, পথিমধ্যে মারা যাচ্ছে; মৃত্যু হলেও আপনজনদের উপস্থিতিতে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় তাদের একাত্মতার আশীর্বাদটুকু পাচ্ছে না।
সব ব্যাপারে অবশ্যই সকল স্বাস্থ্য-বীধি আমাদের মেনে চলতে হবে; নিজেকে ও অপরকে সুরক্ষায় রাখতে হবে; এখানে কোন আপোষ মিমাংশা হতে পারে না। কোন হা-হুতাশ না করে, ঈশ্বরের ওপর নির্ভর করে, প্রর্থনায় ঈশ্বরের ইচ্ছা শ্রবণ করে এবং সম্পূর্ণভাবে তাঁর প্রতি আত্মসমর্পণ করে, যে কঠিন মুহূর্তগুলো বর্তমানে আসছে তা মোকাবেলা করতে হবে যিশুর বিশ্বস্ত বিশ্বাসী রূপে।
প্রিয়জনেরা, রোমীয়দের কাছে সাধু পলের পত্রে আমরা শুনেছি যে, “দীক্ষাস্নানের দ্বারা আমরা খ্রিষ্টের যাতনা ও ক্রুশ-মৃত্যর মধ্যেই অবগাহিত হয়েছি, তাই এসো আমরা এখন খ্রিষ্টের নবজীবনের পথে চলি।”
যিশুর কথা অনুসারে, সত্যিই যদি আমরা যিশুকে আমাদের প্রিয়জনদের চাইতে বেশী ভালবাসি, জীবনে যিশুকে প্রথম স্থান দেই, তাহলে অবশ্যই এই জগতে আমাদের আপনজনদের যিশুর ভালবাসায় আরও বেশী আপন করে নিতে পারব, গ্রহণ করতে পারব এবং ভালবাসতে পারব। যিশুর জন্য যদি নিজের জীবন হারাই, তাহলে ঈশ্বরের জীবন আমরা লাভ করব।
বর্তমান দুর্যোগে কত মানুষ নিজের চাইতে ঈশ্বরকে বেশী ভালবেসে যাচ্ছে। সবধরনের ঝুঁকি নিয়ে, নিজ জীবনের চাইতে অন্যের জীবনকে গুরুত্ব দিয়ে মানুষকে গ্রহণ করছে, অভ্যর্থনা জানাচ্ছে, সেবা দিয়ে যাচ্ছে। আজকে খুবই সজোরে বলতে হচ্ছে যে, সেই ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যসেবাকর্মী যারা আমাকে সেবা করেছেন তারা যদি সকল ঝুঁকি নিয়ে আমার পাশে না থাকতেন, আমাকে গ্রহণ করতেন এবং আমার সেবা না করতেন তা হলে, আমি আজ কোথায় থাকতাম?
আমার সুস্থতার জন্য ঈশ্বরকে ধনব্যাদ জানাই। কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করি তাদের কাছে যারা আমাকে গ্রহণ করেছেন এবং যিশুর শিক্ষা আমার কাছে সত্য করে প্রকাশ করেছে। “যে তোমাকে গ্রহণ করে, সে আমাকে গ্রহণ করে এবং যে আমাকে গ্রহণ করে, আমাকে যিনি পাঠিয়েছেন তাকে সে গ্রহণ করে।”
(২৮ জুন, ২০২০)