শিরোনাম :
শিশুদের অমর একুশে বইমেলা ও পিঠা উৎসব
রাফায়েল পালমা ।। ঢাকা
জোবেদা খানম ছোট্ট সোনামণি জুবিনকে নিয়ে এসেছেন অমর একুশে বইমেলা ও পিঠা উৎসবে। বনশ্রী সরকার একইভাবে তাঁর মেয়েকে নিয়ে এসেছেন।
এমনিভাবে কারো মা, আত্মীয়-স্বজন বা নানা-নানী, দাদা-দিদা তাঁদের শিশুকে নিয়ে অমর একুশে পালনের জন্য জড়ো হয়েছিলেন ঢাকার প্রাণকেন্দ্র মনিপুরীপাড়ায় ডিসি চাইল্ড কেয়ার এন্ড এডুকেশন সেন্টারে।
সকল শিশু, অভিভাবক, শিক্ষক-কর্মী ও ঢাকা ক্রেডিটের পরিচালনা পরিষদের সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত হলো অমর একুশে ফেব্রুয়ারি ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। তার সাথে যোগ হলো বইমেলা ও শীতকালীন পিঠা উৎসব।
সমবায় প্রতিষ্ঠান ঢাকা ক্রেডিটের এই শিশুবান্ধব সেন্টারে শুক্রবার সাপ্তহিক ছুটির দিন থাকাতে বৃহস্পতিবার ২০ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এই আয়োজন করা হয়। এ যেন ছিল শিশু থেকে শুরু করে সকলেরই এক বর্ণাঢ্য মিলনমেলা।
ঢাকা ক্রেডিটের পক্ষ থেকে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভাইস-প্রেসিডেন্ট আলবার্ট আশিস বিশ্বাস ও অন্যান্য বিশিষ্টজনেরা একাত্ম হয়ে ফিতা কেটে সকাল ১০টায় এই অনুষ্ঠামালার শুভ উদ্বোধন করেন। অন্যান্য বিশিষ্টজনদের মধ্যে ছিলেন বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নির্মল রোজারিও, ঢাকা ক্রেডিটের প্রাক্তন ভাইস-প্রেসিডেন্ট শীরেন সিলভেষ্টার গমেজ, বর্তমান বোর্ড অব ডিরেক্টর পাপড়ি প্যাট্রিশিয়া আরেং, পল্লব লিনুস ডি’রোজারিও, ডিসি চাইল্ড কেয়ার পরিচলনা কমিটির আহবায়ক তথা বোর্ড অব ডিরেক্টর মনিকা গমেজ, ক্রেডিট কমিটির সদস্য উমা ম্যাগডেলিন গমেজ, সুপারভাইজরি কমিটির সদস্য বার্নার্ড পংকজ ডি’রোজারিও, ঢাকা ক্রেডিটের নারী কমিটির যুগ্ম-আহবায়ক ও রাজাবাজার খ্রীষ্টান কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান মার্সিয়া মিলি গমেজ, ঢাকা ক্রেডিটের সিইও লিটন টমাস রোজারিও, সিও সুইটি সি পিউরীফিকেশন, সেন্টারের প্রিন্সিপাল ডালিয়া রড্রিগস, শিশুদের অভিভাবক ও সেন্টারের কর্মীবৃন্দ।
সেন্টারের দুজন কর্মীর সঞ্চালনায় উদ্বোকেরা সবাই সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন। সবাই শিশুবান্ধব ভাষায় শিশুদেরকে ১০৫২ খ্রিষ্টাব্দের ভাষার জন্য যে আন্দোলন হয়েছিল তার ইতিবৃত্ত উল্লেখ করে দিনের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেন। ইউনেসকো যে অমর একুশকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে, তা-ও উল্লেখ করেন বক্তারা। ইংরেজিতে পড়াশোনা করলেও বাংলার ওপর বিশেষ যত্নবান হওয়ার পরামর্শ দেন তাঁরা। পৃথিবীতে ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছেন একমাত্র এই সাহসী বাঙালি জাতি; এটা বিশ্বের বুকে এক অবিনশ্বর ইতিহাস- বলে উল্লেখ করেন বক্তাগণ।
ডিসি চাইল্ড কেয়ার এন্ড এডুকেশন সেন্টারের প্রিন্সিপাল ডালিয়া রড্রিগস তাঁর বক্তব্যে বলেন, বাংলা ভাষা ও ঐতিহ্যের প্রতি শিশুদের সচেতন করাই এই সার্বিক অনুষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য।
১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে শিশুরা কবিতা আবৃতিসহ নানা পরিবেশনা উপস্থাপন করে। সাদা কাগজে বাংলা স্লোগানসহ বাংলা হরফ লিখে প্ল্যাকার্ড উচিয়ে এসব পরিবশেনায় মুগ্ধ হয়েছেন উপস্থিত সবাই।
অভিভাবকেরা ডিসিনিউজকে বলেন, ‘এটি একটি অতি জরুরি আয়োজন। ছোটবেলা থেকে শিশুদের দেশ, ভাষা, ভাষার জন্য জাতির যে সংগ্রাম ছিল, তা স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য এই সেন্টার যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়।
ঢাকার প্রাণকেন্দ্র মনিপুরীপাড়ায় প্রায় ৫০ জন শিশু, তাদের অভিভাবকসহ ডিসি চাল্ড কেয়ার এন্ড এডুকেশন সেন্টারে এই আয়োজনে দুটি পাবলিকেশন প্রতিষ্ঠান-ওয়াল্ড বুক হাউজ এবং ট্রাস্ট পাবলিকেশন- শিশুবান্ধব নানা বই নিয়ে স্টল স্থাপন করে। চারটি রকমারি পিঠার স্টল স্থাপন করা হয় সেন্টারের ক্যাম্পাসেই। নানা পিঠা ও বই পরিচিতিতে সহায়তা করেন শিক্ষকেরা।
শিশুদের শৈশব স্বপ্নের মতো। তাদেরকে নিজ দেশের ইতিহাস, ভাষা-ঐতিহ্যের সাথে সচেতন করে সকল কিছুর সাথে নিবিড় বন্ধন তৈরি করে অনুপ্রেরণা দেওয়ার তাগিদে ডিসি চাইল্ড কেয়ার এন্ড এডুকেশন সেন্টার আয়োজন করেছে বই মেলা ও পিঠা উৎসবের।
২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে ডিসি চাইল্ড কেয়ার এন্ড এডুকেশন সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয়। শিশুদের সুন্দর ও নিশ্চিত ভবিষ্যৎ গড়তে ঢাকা ক্রেডিট এই আন্তর্জাতিকমানের চাইল্ড কেয়ার এন্ড এডুকেশন সেন্টার প্রতিষ্ঠা করে। সিঙ্গাপুরে চাইল্ড কেয়ার পরিচালনাকারী অভিজ্ঞ কনসালটেন্ট নিয়োগ দিয়ে এখানকার শিক্ষকদের সিঙ্গাপুর পাঠিয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।
শিশুদের সার্বিক নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যসম্মত খাবার, স্বাস্থ্যকর সেনিটেশন ব্যবস্থা, শিশুবান্ধব পরিবেশসহ ক্যা¤্রজি পদ্ধতিতে পড়াশোনার নিশ্চয়তা দিয়ে ঢাকা ক্রেডিটই বাংলাদেশে প্রথম আন্তর্জাতিকমানের চাইল্ড কেয়ার এন্ড এডুকেশন সেন্টার পরিচালনা করছে।
শুধু তাই নয়, জাতীয় ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন, শিক্ষা সফর, হাতে কলমে শিক্ষাসহ নানাবিধ অনুশীলন এই প্রতিষ্ঠানকে দিয়েছে একটি শিশুবান্ধব প্রতিষ্ঠানের অনন্য বৈশিষ্ট্য।
এখানে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল সম্প্রদায়ের ৮০ জন শিশু সারাদিন থাকা-খাওয়া, স্নান, বিশ্রাম, শরীরচর্চা ও সৃষ্টিশীল অনুশীলনের মাধ্যমে জীবন গড়ার সুযোগ পাচ্ছে। বর্তমানে ৫০ জন শিশু এই সেবাগ্রহণ করে যাচ্ছে।