শিরোনাম :
পুনরুত্থানকালের ষষ্ঠ রোববারের উপদেশ
কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিও, সিএসসি || ঢাকা
আজ পুনুরুত্থানকালের ষষ্ঠ রোববার। আগামী রোববার যিশুর স্বর্গারোহণ। তার পরবর্তী রোববার, অর্থাৎ ৩১শে মে, পঞ্চাসত্তমী রোববার, অর্থাৎ পবিত্র আত্মার অবতরণ পর্ব।
আগামী দুটো রোববারের পর্ব সামনে রেখে আজ আমরা যিশুর কথা ধ্যান করতে পারি। স্বর্গে আরোহণের পূর্বে যিশু বললেন: “আমি জগত ছেড়ে পিতার কাছে চলে যাচ্ছি; আর অল্প সময় মাত্র বাকী আছে, তারপর এই জগত আমাকে আর দেখতে পাবে না; তোমরা কিন্তু আমাকে দেখতে পাবে, আমি জীবিত আছি বলেই দেখতে পাবে। আর তোমরাও তেমনি তখন জীবিতই হবে।”
যিশু মঙ্গলসমাচারে আরও বলছেন: “আমি তোমাদের অনাথ অবস্থায় ফেলে রাখবো না”। “আমি পিতার কাছে আবেদন জানাব: তিনি তখন আর একজন সহায়ককে তোমাদের দেবেন, যিনি চিরকালের মতোই তোমাদের সঙ্গে থাকবেন। তিনি দেবেন সেই সত্যময় আত্মাকে, যিনি তো সর্বদাই তোমাদের পাশেই আছেন, পরে অন্তরেও থাকবেন।”
প্রিয়জনেরা, যিশুর জীবনে একদিকে দেখি স্বর্গীয় পিতার সঙ্গে আবার অন্যদিকে পবিত্র আত্মার সঙ্গে একাত্মতার সম্পর্ক। আমরা ত্রিব্যক্তি পরমেশ্বরে বিশ্বাস করি। পিতা, পুত্র ও পবিত্র আত্মায় আমরাও জীবনযাপন করি। পবিত্র ত্রিত্বে আমাদের জীবন সম্বন্ধে যদি জানতে হয় তাহলে যিশুর দিকে তাকাতে হয়।
যিশু পবিত্র ত্রিত্বের দ্বিতীয় ব্যক্তি। পুত্র যিশুই পিতাকে প্রকাশ করেছেন, নিজ জীবনের সবকিছুর মধ্য দিয়ে তাঁকে প্রকাশ করেছেন। যিশু কী প্রকাশ করেছেন?: পিতার ভালবাসা, তাঁর স্বপ্ন ও পরিকল্পনা, মানুষের জন্য তার দয়া ও করুণা, ক্ষমা ও পরিত্রাণ। কীভাবে তিনি পিতাকে প্রকাশ করেছেন? তিনি প্রকাশ করেছেন এই সত্য স্বীকার করে যে, তিনি পিতার কাছ থেকে এসেছেন, পিতা তাঁকে এই জগতে পাঠিয়েছেন; পিতা তাঁর সঙ্গে আছেন, আর তিনিও পিতার সঙ্গেই বাস করেছেন; পিতার কথা তিনি শুনেছেন, পিতার প্রতি তিনি বাধ্য ছিলেন জীবনভর। এই জগতে পিতার ইচ্ছা পালনের জন্য সবকিছু করেছেন; দুঃখ-কষ্ট ও যাতনা-মৃত্যু বরণ করেছেন। জীবনের সমাপ্তিতে, স্বর্গীয় পিতা তাঁকে পুরস্কৃত করেছেন; তাঁকে মৃত্যু থেকে পুনরুত্থান করিয়েছেন এবং তাঁর দক্ষিণপাশে স্থান দিয়ে, তিনি তাঁকে স্বর্গীয় মহিমা ও গৌরব দান করেছেন।
পবিত্র ত্রিত্বের দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে একদিকে ছিলো পিতার সাথে যিশুর সম্পর্ক আর অপরদিকে পবিত্র আত্মার সাথে তাঁর সংযোগ। একটা সত্য খুব স্পষ্টভাবে আমাদের স্বীকার করতে হয় যে, যীশু এই জগতে পবিত্র আত্মায় অধিষ্ঠিত ও অভিষিক্তজন ছিলেন, এবং পিতাকে প্রকাশ করার জন্য পবিত্র আত্মার শক্তিতে সবকিছু করেছেন। আর সেই পবিত্র আত্মাকেই পিতার দান হিসেবে যিশু তাঁর শিষ্যদের, অর্থাৎ আমাদের কাছে রেখে গেছেন। তাই যিশু বলছেন, আমি তোমাদের অনাথ করে রেখে যাব না; পবিত্র আত্মাই তোমাদের সঙ্গে থাকবেন। তিনি হবেন তোমাদের সহায়ক, যিনি আমার শিক্ষা স্মরণ করিয়ে দেবেন ও তা বুঝিয়ে দেবেন। পবিত্র আত্মা তোমাদের মধ্যে আমাকেই সর্বদা জীবিত রাখবেন। তাঁরই মধ্য দিয়ে আমি তোমাদের মাঝে জীবিত থাকব, আর তোমরাও আমার মধ্যে জীবিত থাকবে। “খ্রিষ্ট জীবিত” (খ্রিষ্টুস ভিভিত), সেই জীবিত খ্রিষ্টে পবিত্র আত্মার দ্বারা আমরাও জীবিত।
পবিত্র আত্মাই ভালবাসার শক্তি। এই ভালবাসা দিয়েই আমরা স্বর্গীয় পিতাকে ভালবাসি, প্রভু যিশুকে ভালবেসে তাঁর জীবনাদর্শ অনুসরণ করি। এভাবেই আমরা এই জগতে পবিত্র আত্মায় জীবনযাপন করি।
শিষ্যচরিত থেকে নেয়া আজকের প্রথম শাস্ত্রপাঠে, র্খ্রিষ্টীয় জীবনে পবিত্র আত্মার প্রয়োজনীয়তার কথা স্পষ্ট বলা হয়েছে। সামারীয় অঞ্চলের লোকেরা প্রভু যীশুখ্রিষ্টের নামে দীক্ষাস্নাত হয়েছিল। কিন্তু খ্রিষ্টকে শুধু আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করা, অথবা খ্রিষ্টান হওয়াই যথেষ্ট নয়। খ্রিষ্টবিশ্বাসীদেরকে খ্রিষ্টীয় আদর্শ অনুসারে জীবন যাপন করতে হবে। আর তা সম্ভব যদি খ্রিষ্টবিশ্বাসীরা পবিত্র আত্মায় পূর্ণ দীক্ষা গ্রহণ করে। তাই মণ্ডলীর প্রেরিতশিষ্য পিতর ও যোহন, সামারীয় অঞ্চলের খ্রিষ্টে দীক্ষাস্নাত ব্যক্তিদের কাছে এসে, যেমন বলা হয়েছে: “তাদের জন্য প্রার্থনা করলেন যেন পবিত্র আত্মাকে তারা লাভ করতে পারে। তাদের ওপর হাত রাখলেন এবং তারা তখন পবিত্র আত্মাকে লাভ করল”।
প্রিয়জনেরা, খ্রিষ্টীয় জীবন যাপন করতে হলে পবিত্র আত্মায় আমাদেরকে আরও উজ্জীবিত ও নবীকৃত হতে হবে। পবিত্র আত্মার প্রেরণা ও শক্তি ছাড়া খ্রিষ্টীয় জীবনযাপন সম্ভব নয়। পবিত্র আত্মাই খ্রিষ্টের কথা ও আদেশ, তাঁর আদর্শ ও শিক্ষা আমাদের জীবনের বাস্তবতায় স্মরণ করিয়ে দেন, আমাদেরকে বুঝিয়ে দেন এবং আমাদের অন্তরে কণ্ঠস্বর হয়ে নির্দেশ প্রদান করেন। এভাবেই তিনি আমাদের সহায়ক। খ্রিষ্টীয় জীবনে আমাদের মধ্যে যাকিছু ভাল তা পবিত্র আত্মারই ফল বা ফসল। আমাদের জীবনের সাধনা হলঃ পবিত্র আত্মার শক্তিতে, স্বর্গীয় পিতার সন্তান হওয়ার জন্য, পুত্র যিশুর আদর্শ অনুসারে জীবন যাপন করা।
আসুন প্রিয়জনেরা, ঐশবাণী পাঠ ও ধ্যানের মধ্য দিয়ে এবং আগামী রোববার থেকে পবিত্র আত্মার প্রতি নভেনা করে, মা মারীয়াকে আমাদের পরিবারের মাঝখানে রেখে, পবিত্র আত্মার আগমনের অপেক্ষায় আমরা সবাই প্রার্থনারত থাকি। আমেন ॥
১৭ মে, ২০২০