শিরোনাম :
প্রিয়দর্শিনী তারকা ডিনিয়া: কাজ করতে চান গারো তরুণীদের নিয়ে
কর্মজীবি বাবা-মায়ের তিন মেয়ের মধ্যে ডিনিয়া রখো অলিয়া সবার বড়। কঠোর শাসনে বেড়ে ওঠা ডিনিয়ার বাবা-মা চাইতেন না মেয়ে নাচ শিখুক। তাদের অজান্তে আর নিজের চেষ্টায় নাচ রপ্ত করেছেন। নাচের জন্যে অসংখ্য পুরস্কার তার ঝুলিতে জমা হয়েছে। গতবছর প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা নাচিয়ের পুরস্কার জিতে নেন। অবসরে আড্ডা আর সঙ্গীত নিয়ে মেতে থাকেন। কাজ করে যেতে চান গারো তরুণীদের নিয়ে। যে বাবা-মা চাইতেন না মেয়ে নাচ শিখুক, আজ তাঁরাই তাকে নিয়ে গর্ব করেন। খুব মিষ্টি, চঞ্চল আর মেধাবী ডিনিয়া গতবছর অপ্রত্যাশিত ভাবে মিস ওয়ানগালা নির্বাচিত হয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন। সম্প্রতি ‘কিউট-চ্যানেল আই পার্বত্য প্রিয়দর্শিনী’ প্রতিযোগিতায় প্রথম রানার-আপ নির্বাচিত হন। কথা হয় তার সঙ্গে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন সুমন নংমিন।
ডিনিয়া রখো অলিয়া ‘কিউট-চ্যানেল আই পার্বত্য প্রিয়দর্শিনী’ প্রতিযোগিতায় প্রথম রানার-আপ নির্বাচিত হওয়ায় আপনাকে অভিনন্দন!
ডিনিয়া: ধন্যবাদ।
ডিসিনিউজ: কেমন আছেন?
ডিনিয়া: এইতো, ভাল আছি।
ডিসিনিউজ: শৈশব কোথায় কেটেছে?
ডিনিয়া: ঢাকায় বড় হয়েছি। শৈশবের দিনগুলো খুব আনন্দময় আর প্রাণবন্ত ছিল। যদিও শহরে বেড়ে ওঠা কিন্তু খেলাধুলা বাদ দিইনি, অনেক মজা করতাম। খুব মনে পড়ে সেই দিনগুলো। যদি পারতাম, শৈশবে আবার ফিরতে চাই।
ডিসিনিউজ: সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে কি আপনার বেড়ে ওঠা?
ডিনিয়া: সত্যি বলতে আমি সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে বড় হয়নি। মা-বাবা দু’জনেই চাকরীজীবি ছিলেন। কঠোর শাসনে বড় হয়েছি। তবে খুব ডানপিটে আর জেদি ছিলাম। ছোটবেলা থেকেই নাচ পছন্দ করতাম। যদিও পরিবার চাইতোনা আমি নাচ শিখি। নিজের উদ্যোগেই নাচ শেখা, এখনো করছি। নাচটা প্রফেশন্যালি করি আর গানটা শখের বশে।
ডিসিনিউজ: আপনি মিস ওয়ানগালা-২০১৬ নির্বাচিত হয়েছিলেন। সে সময়কার অনুভূতি কেমন ছিল?
ডিনিয়া: এটা আমার কাছে অপ্রত্যাশিতই ছিল। ভাবতেও পারিনি মিস ওয়ানগালা নির্বাচিত হবো। ভক্তদের কাছ থেকে কম ভোট পাই, তবে শুরু থেকে গ্র্যান্ড ফিনালে পর্যন্ত সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি, দৃঢ় আত্নবিশ্বাস ছিল। সবশেষে সৃষ্টিকর্তার আশির্বাদ আর মানুষের ভালবাসায় মিস ওয়ানগালা নির্বাচিত হয়েছি। গ্র্যান্ড ফিনালে যখন আমার নাম ঘোষণা করা হলো সেই মুহুর্তটি এখনো মনে পড়ে, বিশ্বাসই হচ্ছিল না। খুব এক্সসাইটেড ছিলাম, পরে নিজেকে খুব সুখি মনে হচ্ছিল।
ডিসিনিউজ: পড়াশোনা সম্পর্কে একটু বলুন?
ডিনিয়া: সম্প্রতি প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি থেকে ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স সমপন্ন করেছি।
ডিসিনিউজ: শুনেছি, আপনি প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা নাচিয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন?
ডিনিয়া: হ্যাঁ, সেটা ২০১৬ সালে, সম্মাননা হিসেবে ক্রেস্ট আর সনদপত্র দেওয়া হয়েছিল।
ডিসিনিউজ: পরিবারে আর কে কে আছেন?
ডিনিয়া: বাবা-মা আর ছোট দুই বোন।
ডিসিনিউজ: সম্প্রতি আপনি ‘কিউট-চ্যানেল আই পার্বত্য প্রিয়দর্শিনি’ প্রতিযোগিতায় প্রথম রানার-আপ নির্বাচিত হয়েছেন? কেন এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের ইচ্ছে প্রকাশ করলেন?
ডিনিয়া: মিস ওয়ানগালা প্রতিযোগিতা গারোদের নিয়ে আর ‘প্রিয়দর্শিনী’ বাংলাদেশের অনেকগুলো আদিবাসী নিয়ে একটি রিয়েলিটি শো। চেয়েছি গারো জাতির প্রতিনিধিত্ব করি, পেরেছিও। রানার-আপ এর মুকুট ছিনিয়ে আনা তারই প্রতিফলন এবং এটি গর্বেরও বটে। দেখাতে পেরেছি আমরাও পারি।
ডিসিনিউজ: প্রিয়দর্শিনী রিয়েলিটি শো’র চূড়ান্ত পর্বে যখন প্রথম রানার-আপ হিসেবে আপনার নাম ঘোষণা করা হলো সেই মুহুর্তের অনুভূতি….
ডিনিয়া: চ্যাম্পিয়ন হতে পারলে অনেক খুশি হতাম। যা হোক, আফসোস নেই তাতে। রানার-আপ হতে পারাটাও আমার জন্যে পরম সৌভাগ্যের। কারণ সরাসরি সম্প্রচারিত এধরনের রিয়েলিটি শোতে নিজের জাতির প্রতিনিধিত্ব করা আর সম্মান বয়ে আনা অনেক বড় প্রাপ্তির এবং আমার জন্যে অনেক বড় অর্জনও বটে। আমি ভীষণ খুশি।
ডিসিনিউজ: এই প্রাপ্তিতে ভক্তদের কাছ থেকে কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
ডিনিয়া: জানতাম না আমার এতো শুভাকাঙ্খী আছে। যেদিন (৭ জানুয়ারি, ২০১৭) রানার-আপ হলাম, মানুষের শুভেচ্ছা আর ভালবাসায় ফেসবুকের ওয়াল ছেয়ে যায়। মুঠোফোন ভক্তদের বার্তা আর অভিনন্দনে ভরে যায়। বিশেষভাবে আমার পরিবার এত খুশি ছিল যে, সবাইকে ফোন করে আমার কথা জানাচ্ছিল। মনে হয়েছে এটা শুধু আমার সফলতা না, এটা আমার জাতির অর্জন, পরিবারের অর্জন।
ডিসিনিউজ: যতটুকু জানি বিচারক হিসেবে চিত্রনায়ক ফেরদৌস ছিলেন, তিনি কী বলেছিলেন ?
ডিনিয়া: তিনি উৎসাহ দিয়ে বলেছিলেন, তোমার ভেতরে অসাধারণ প্রতিভা রয়েছে। চ্যাম্পিয়ন হতে পারনি বলে মন খারাপ করনা, সামনে এগিয়ে যাও আর চ্যানেল আই’এর সঙ্গে থাকো।
ডিসিনিউজ: কী করতে ভালবাসেন?
ডিনিয়া: আড্ডা ভীষণ পছন্দ করি, সময় পেলে গান শুনি, সঙ্গীত চর্চা করি।
ডিসিনিউজ: আপনার আইকন……
ডিনিয়া: আমার মা। মা কারো উপকার না করতে পারলেও, অপকার করেননি। আমিও তাই করার চেষ্টা করি।
ডিসিনিউজ: সবকিছুর পেছনে পরিবারের অবদান?
ডিনিয়া: আমার পরিবার আমার সবকিছু। এতদূর আসা আর খ্যাতির পেছনের কৃতিত্ব পুরোটাই পরিবারকে দিতে চাই। বাবা আমাকে বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখিয়ে ছিলেন, পড়াশোনার ব্যাপারে কোন ছাড় দেননি। এক কথায়, পরিবার আমার লাইফ-সাপোর্ট।
ডিসিনিউজ: মিস ওয়ানগালা ও প্রিয়দর্শিনী’র প্রথম রানার-আপ নি:সন্দেহে কেবলি সম্মাননা নয়, দায়িত্বও বটে? সেই প্রেক্ষিতে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?
ডিনিয়া: গারো জাতিকে আরও বৃহৎ পরিমন্ডলে তুলে ধরতে চাই। বিশেষভাবে গারো তরুণীদের নিয়ে কাজ করার পরিকল্পনা আছে।
ডিসিনিউজ: আরেকটু স্পষ্ট করে বলুন?
ডিনিয়া: গারো মেয়েদের একটি অংশ এখনও শিক্ষায় পিছিয়ে আছে, পড়াশোনা ছেড়ে বিউটি পার্লারের দিকে ঝুঁকছে। তাদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির কাজ করে যেতে চাই, যাতে শিক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তারা সামনে এগিয়ে যায়।
ডিসিনিউজ: আগামীর স্বপ্ন?
ডিনিয়া: আরও বড় হতে চাই। দেশের মানুষের জন্যে কাজ করতে চাই আর গারো সমাজের জন্য আলাদা কিছু করতে চাই, যা আগে কেউ কখনো করেনি।
ডিসিনিউজ: তরুণদের উদ্দেশ্যে……
ডিনিয়া: আত্নপ্রত্যয়ী হই, নিজের জাতিসত্তা আর সবধর্মের মানুষকে ভালবাসি, আধুনিক হই তবে নিজের কৃষ্টি-সংস্কৃতিকে ভুলে নয়।
ডিসিনিউজ: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অনেক কৃতজ্ঞতা।
ডিনিয়া: আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।
আরপি/আরবি/এসএন/ ১৮ জানুয়ারি, ২০১৭