ঢাকা ,
বার : রবিবার
তারিখ : ২২ ডিসেম্বর ২০২৪
বাংলা : ৮ পৌষ ১৪৩১
Dcnewsbd Facebook
Dcnewsbd Twitter

শিরোনাম :

প্রথম পাতা প্রবন্ধ উদ্যোক্তা ঋণ : ঢাকা ক্রেডিটের একটি অনন্য ঋণ প্রোডাক্ট

উদ্যোক্তা ঋণ : ঢাকা ক্রেডিটের একটি অনন্য ঋণ প্রোডাক্ট

0
724

স্বপন রোজারিও ।। ডিসিনিউজ

দি খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি:, ঢাকা (ঢাকা ক্রেডিট) সবসময় সদস্যদের উন্নয়নে বিভিন্ন প্রোডাক্ট ডেভেলপ করে যাচ্ছে।

কিছুদিন পূর্বে ঢাকা ক্রেডিট ‘পেনশন বেনিফিট স্কীম’ নামে একটি সঞ্চয়ী প্রোডাক্ট চালু করেছে। এই প্রোডাক্ট গ্রহণকারী একজন সদস্য ব্যবসা বা চাকুরী থাকাকালীন সময়ে মাসিক হারে জমা প্রদান করবেন এবং অবসরকালীন সময়ে মাসিক হারে সুদ সমেত টাকা উত্তোলন করতে পারবেন। ঢাকা ক্রেডিট কর্তৃক মাসিক হারে টাকা ফেরৎ প্রদানের এই ধারনা ক্রেডিট ইউনিয়নে প্রথম এবং নতুন ধারনা হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। অতি সম্প্রতি ঢাকা ক্রেডিট উদ্যোক্তা ঋণ চালু করেছে। সদস্যদের বিভিন্ন সেক্টরে প্রশিক্ষণ দিয়ে এই ঋণ প্রদান করা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে- গরু মোটাতাজাকরণ, গাভী পালন, মৎস চাষ, হাঁস মুরগী পালন, ক্ষুদ্র ব্যবসা, ঔষধ ব্যবসা ও ফ্রিল্যান্সিং। গরু মোটাতাজাকরণ, গাভী পালন ও ক্ষুদ্র ব্যবসা বিষয়ক কিছু প্রশিক্ষণ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে এবং ঋণ প্রদান কার্যক্রম আরম্ভ করা হয়েছে। এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ত করা হয়েছে। এই উদ্যোক্তা ঋণ চালু হওয়ার ফলে সহজে ঋণ নিয়ে সদস্যগণ অতি দ্রুততম সময়ে সফল উদ্যোক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে নিজের জন্য ও অপরের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারবে। সমিতির কোয়ালিটি ঋণ বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে। এ ঋণের ফলে আমাদের সমাজে আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন সাধিত হবে, আর তা হলো- খেলাপী আর হবে না। ফলশ্রæতিতে আমরা একটি খেলাপীবিহীন সমাজ উপহার দিতে পারবো বলে আমাদের ধারনা। ‘খেলাপী’ আমাদের সমাজের ক্যান্সার স্বরূপ। যেহেতু ঢাকা ক্রেডিট প্রশিক্ষণ দিয়ে উদ্যোক্তা ঋণ প্রদান করছে, তাই এই ঋণে খেলাপী হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। একেবারে শুন্যের কোঠায়। এই উদ্যোক্তা ঋণ একদিকে যেমন উদ্যোক্তা তৈরী করবে, অন্যদিকে খেলাপীমুক্ত সমাজ বিনির্মাণ করবে। এটাই এই ঋণের বিশেষত্ব। সদস্যদের এই ঋণের সুবিধা গ্রহণের অনুরোধ করছি। নি¤েœ এই ঋণের নীতিমালা প্রদান করা হল।

উদ্দেশ্য:
সমিতির সদস্যদের উৎপাদনমুখী এগ্রোবেইজড প্রজেক্ট এবং ফ্রিল্যান্সিং-এর মাধ্যমে স্বনির্ভর করার লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ প্রদান পূর্বক ঋণ প্রদান করা। সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে উৎপাদনমুখী কাজের মাধ্যমে উদ্যোক্তা সৃষ্টি করা ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা এই প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য।

ঋণ আবেদনের যোগ্যতা:
১. ঋণ আবেদকারীকে ঢাকা ক্রেডিটের নিয়মিত সদস্য হতে হবে।
২. ঋণ আবেদনের পূর্বে আবেদনকারীকে ঢাকা ক্রেডিট/অন্য অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান থেকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত হতে হবে।
৩. সাধারণ ঋণ থাকাবস্থায়ও এ ঋণ গ্রহণ করা যাবে।
৪. ৫,০০,০০০/- টাকা পর্যন্ত ঋণের ক্ষেত্রে ঋণের এক দশমাংশ টাকা এবং ৫,০০,০০০/- টাকার উর্ধ্বে ঋণের ক্ষেত্রে ঋণের এক অষ্টমাংশ টাকা আবেদনকারীর সঞ্চয়ী/এসটিডি হিসেবে থাকতে হবে যা ঋণের বিপরীতে জামিন হিসেবে গণ্য হবে।
৫. তরুণ উদ্যোক্তাদের অগ্রাধিকার প্রদান করা হবে।
৬. ঋণ আবেদনকারীর বয়সসীমা সর্বোচ্চ ৬৫ বছর।

নিয়মাবলী:
১. সমিতির নির্ধারিত আবেদন পত্রের মাধ্যমে এ ঋণ আবেদন করতে হবে।
২. ঋণ আবেদপত্রের সাথে হালনাগাদ ২ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি, ঢাকা ক্রেডিট ডিজিটাল আইডি, এনআইডি কার্ডের ফটোকপি ও পরিবারের (স্বামী-স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে) সম্মতিপত্র দিতে হবে।
৩. প্রশিক্ষণের সনদপত্রের ফটোকপি দিতে হবে।
৪. আবেদনকৃত ঋণের জন্য ঢাকা ক্রেডিট কর্তৃক প্রদত্ত নির্দিষ্ট ফরমেটে প্রজেক্ট প্রপোজাল ঋণ আবেদনের সাথে জমা দিতে হবে (প্রয়োজনে অফিসের সহযোগিতা গ্রহণ করা যাবে)।
৫. ঋণের ধাপসমূহ: (ক) ১ম ধাপ- সর্বোচ্চ ৫,০০,০০০/- টাকা, (খ) ২য় ধাপ- সর্বোচ্চ ১৫,০০,০০০/- টাকা ও (গ) ৩য় ধাপ- সর্বোচ্চ ৩০,০০,০০০/- টাকা। একটি ঋণ গ্রহণ করে নূন্যতম ৬টি মাসিক কিস্তিতে পরিশোধ এবং একটি ধাপের নূন্যতম ৫০% ঋণ গ্রহণ করা হলে পরবর্তী ধাপের ঋণ প্রাপ্য হবেন।
৬. প্রজেক্ট প্রপোজালের প্রাক্কলিত ব্যয়ের উপর ভিত্তি করে ঋণ অনুমোদন দেয়া হবে।
৭. অনুমোদিত ঋণের টাকা প্রজেক্টের প্রয়োজন অনুসারে একাধিক কিস্তিতে প্রদান করা হবে।
৮. ঋণের বার্ষিক সুদের হার ১২%।
৯. সম্পূর্ণ ঋণ নিয়মিত পরিশোধ করলে মোট সুদের ১০% হারে রিবেট প্রদান করা হবে।
১০. আবেদনকৃত ঋণের জন্য ১,০০০/- টাকা সার্ভিস চার্জ প্রযোজ্য হবে যা সমিতির নামে একাউন্ট পেয়ী ব্যাংক চেকের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে।
১১. ঢাকা ক্রেডিট কর্তৃক প্রকল্প পরিদর্শণের সময় পরিদর্শককে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে হবে।

ঋণের জামিন :
১. আবেদনকারীর এমআইসিআর চেক (৩টি) জামিনসহ নন জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প পেপারে ঋণ পরিশোধের অঙ্গীকারপত্র দিতে হবে।
২. পরিবারের উপার্জনশীল একজন সদস্য অথবা পরিবারের বাইরে একজন উপার্জনশীল সদস্যের নন জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প পেপারে অঙ্গীকার দিতে হবে।
৩. প্রজেক্টের মালামাল/উপকরণ ঋণের বিপরীতে দ্বায়বদ্ধ থাকবে এই মর্মে অঙ্গীকারনামায় উল্লেখ থাকতে হবে।
৪. ঋণ চলাকালীন সময়ে উক্ত দায়বদ্ধকৃত প্রকল্পে ঢাকা ক্রেডিটের সাইনবোর্ড থাকতে হবে। সাইনবোর্ডের খরচ ঋণ গ্রহণকারী বহন করবেন।

ঋণ পরিশোধের নিয়মাবলী:
১. ঋণ প্রদানের তারিখ থেকে দৈনিক ভিত্তিতে ঋণের সুদ গণনা করা হবে।
২. প্রথম ৬ মাস কিস্তি প্রদান বাধ্যতামূলক নয় তবে শুধু সুদ প্রদান করতে হবে।
৩. ঋণ পরিশোধের কিস্তিসমূহ: (ক) ১ম ধাপ- সর্বোচ্চ ৫,০০,০০০/- টাকা সর্বোচ্চ ৩৬ কিস্তিতে, (খ) ২য় ধাপ- সর্বোচ্চ ১৫,০০,০০০/- টাকা সর্বোচ্চ ৪৮ কিস্তিতে ও (গ) ৩য় ধাপ- সর্বোচ্চ ৩০,০০,০০০/- টাকা সর্বোচ্চ ৬০ কিস্তিতে পরিশোধ করতে হবে। তবে কোন সদস্য যদি প্রজেক্ট বন্ধ করে দেন সেক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ঋণ এককালীন পরিশোধ সাপেক্ষে দায়মুক্ত পত্র নিতে হবে।
৪. ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে সমিতির প্রচলিত নিয়ম অনুসারে জরিমানাসহ অন্যান্য খরচ আদায় করা হবে।
৫. এ ঋণ সাধারণ ঋণের মতই নিরাপত্তা স্কীমের আওতায় থাকবে অর্থাৎ প্রতিমাসে গৃহীত ঋণের উপর প্রতি হাজারে ৫০ পয়সা করে নিরাপত্তা স্কীম প্রদান করতে হবে।
৬. গৃহীত ঋণ ৩ মাসের বেশি খেলাপী হলে খেলাপী ঋণ আদায় নীতিমালা এবং বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুসারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
৭. ঋণ গ্রহীতাকে ব্যবসার ধরন অনুসারে প্রজেক্ট হতে আয়ের টাকা দৈনিক/সাপ্তাহিক/মাসিক ভিত্তিতে ঢাকা ক্রেডিটের সঞ্চয়ী/এসটিডি হিসেবে জমা রাখতে হবে।

এই ঋণ নীতিমালা ঢাকা ক্রেডিটের পরিচালকমন্ডলী কর্তৃক প্রণীত বিধায় এর যে কোন পরিবর্তন, পরিবর্ধন বা সংযোজন বোর্ডের এখতিয়ারভুক্ত।