শিরোনাম :
কোর-দি জুট ওয়ার্কস্-এর ৫০ বছরের সুবর্ণজয়ন্তী পালন
ডিসিনিউজ ।। ডেক্স
‘ভালোবাসা, প্রকৃতি ও ন্যায্য বাণিজ্যের সাথে ৫০ বছরের পথচলা’ প্রতিপাদ্য নিয়ে কোর-দি জুট ওয়ার্কস্ (কারিতাস বাংলাদেশের ট্রাস্ট) ৫০ বছরের সুবর্ণজয়ন্তী পালন করেছে।
১২ সেপ্টেম্বর, রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে জুবিলী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কোর-দি জুট ওয়ার্কস্-এর সভাপতি ও কারিতাস বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক সেবাষ্টিয়ান রোজারিও’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী জনাব গোলাম দস্তগীর গাজী, বীরপ্রতীক, এমপি। গেস্ট অব অনার ছিলেন ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশের আর্চবিশপ বিজয় এন. ডি’ক্রুজ ওএমআই। বিশেষ অতিথি ছিলেন কারিতাস বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ও খুলনা ধর্মপ্রদেশের বিশপ জেমস্ রমেন বৈরাগী, রপ্তানী উন্নয়ন ব্যুরোর মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) জনাব মাহবুবুর রহমান ও কোর-দি জুট ওয়ার্কস্ বোর্ড অব ট্রাস্টিজের আজীবন সদস্য সিস্টার মেরী লিলিয়ান এসএমআরএ। প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনকারী, অংশীজন, ক্রেতা প্রতিনিধি, প্রতিষ্ঠানের কর্মীবৃন্দ ও সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিবৃন্দসহ প্রায় ৮ শতাধিক ব্যক্তি।
সকাল সাড়ে ৯টায় আনন্দ শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের শুরু হয়। এরপর জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন, বেলুন উড়ানো ও শান্তির প্রতীক পায়রা উন্মুক্তকরণ, জুবিলী স্মরণিকার মোড়ক উন্মোচন, অতিথিদের শুভেচ্ছা স্মারক প্রদান, প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শনী, বক্তব্য ও সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠান।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে কোর-দি জুট ওয়ার্কস্-এর পরিচালক শিশির আঞ্জেলো রোজারিও সকলকে সুবর্ণজয়ন্তীর শুভেচ্ছা জনিয়ে বলেন, ‘১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে সদ্য স্বাধীন দেশে কারিতাস বাংলাদেশের একটি প্রকল্প হিসেবে কোর-দি জুট ওয়ার্কস-এর সূচনা। যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশে ক্ষতিগ্রস্ত নারী ও বিধবাদের জন্য আয়ের একটি স্থায়ী ব্যবস্থা করে দিতে হস্তশিল্পের প্রশিক্ষণ, উৎপাদন এবং রপ্তানীর মাধ্যমে এ সংস্থার যাত্রা শুরু। শুরু থেকে এই পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি নিবেদিতভাবে কাজ করছে অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিত নারী, প্রতিবন্ধী এবং আদিবাসী সম্প্রদায়ের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য।’
প্রধান অতিথি মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী কোর-দি জুট ওয়ার্কস্-এর কার্যক্রমের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ‘নির্যাতিত, স্বামীহারা, সামাজিকভাবে নিগৃহীত, অসহায়, দরিদ্র এবং পিছিয়ে পড়া নারীদের কর্মসংস্থান ও আয়ের সুযোগ সৃষ্টিতে ও তাদের ভাগ্যোন্নয়নে ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে পাটজাত হস্তশিল্প উৎপাদন ও তা বিদেশে রপ্তানী করার মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল। তাই আমি কোর-দি জুট ওয়ার্কস্-এর প্রশংসা করি। সংস্থা এ উদ্যোগের মাধ্যমে বিগত ৫০ বছরে প্রায় ৬০০০ নারীদের জীবন যাত্রার মানান্নোয়নের জন্য যেসব কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে তা জেনে খুশি হয়েছি। কোর-দি জুট ওয়ার্কস্-এর পথ অনুসরণ করে আরো অনেকেই স্বপ্রণোদিত হয়ে আর্তমানবতার সেবায় এগিয়ে আসবেন এ প্রত্যাশা করি।’
গেস্ট অব অনার আর্চবিশপ বিজয় কোর-দি জুট ওয়ার্কস্-এর সুবর্ণজয়ন্তীতে সবাইকে অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, ‘কোর-দি জুট ওয়ার্কস্ উৎপাদনকারীদের কল্যাণে, ন্যায্য বাণিজ্যের অনুশীলনে এবং ক্রেতাদের চাহিদা মূল্যায়নে সর্বদা আন্তরিক। অসংখ্যা দরিদ্র পরিবার এই প্রতিষ্ঠানের হাত ধরে পারিবারিক স্বচ্ছলতা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। কোর-দি জুট ওয়ার্কস দরিদ্রর্দে সরাসরি খাবার কিনে দেয়নি, তবে খাবার কিনে খাওয়ার সামর্থ তৈরি করে দিয়েছে। তাদের ক্ষমতায়ন করেছে।’
সভাপতি সেবাষ্টিয়ান বলেন, ‘কোর-দি জুট ওয়ার্কস ন্যায্য বাণিজ্যের ‘দশটি মানদন্ড’ বজায় রাখার লক্ষ্যে ক্রমাগত চেষ্টা চালিয়ে ক্রেতাদের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে এবং চমৎকার মানের কারুশিল্প পণ্য রপ্তানী নিশ্চিত করে তার দীর্ঘ যাত্রা চালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। প্রকৃতিগতভাবেই পণ্যগুলো পরিবেশ বান্ধব। ন্যায্য মূল্য এবং সময়ানুগ সরবরাহ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠানটি টিকে থাকার ভিত্তি হিসেবে শক্তি যুগিয়েছে।’
‘কোর-দি জুট ওয়ার্কস্” বাংলাদেশের স্ব-নামধন্য ঘএঙ কারিতাস বাংলাদেশের একটি ট্রাস্ট। ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দের ২ সেপ্টেম্বর হতে এ প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম শুরু হয়। কাজ শুরুর কয়েক বছরের মধ্যেই কারিতাস বাংলাদেশ এটিকে একটি সম্পূর্ণ অ-লাভজনক হস্তশিল্প উৎপাদন ও রপ্তানীকারক চ্যারিটেবল ট্রাষ্ট হিসাবে ঘোষণা করেন। এরপর এ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সরকারের ট্রাষ্ট আইনের অধীনে নিবন্ধন গ্রহণ করে, যার ভিত্তিতে অদ্যাবধি অলাভজনকভাবে ট্রাষ্টি বোর্ড দ্বারা প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হচ্ছে।
কারিতাস বাংলাদেশ-এর তৎকালীন উন্নয়ন কর্মকর্তা যিনি পরবর্তীতে নির্বাহী পরিচালক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন ফাদার রিচার্ড উইলিয়াম টিম সিএসসি; বাংলাদেশের নারী সমাজের উন্নয়নের বিষয়টি গভীরভাবে উপলব্ধি করেন এবং ‘কাজের বিনিময়ে সহযোগিতা’ দিতে পারলে উন্নয়ন স্থিতিশীল হবে বলে মনে করেন। এই বিষয়ে তিনি দেশের অনেক বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সাথে আলোচনা করেন। তিনি নিজেও বিভিন্ন দিক পর্যবেক্ষন ও পর্যালোচনা করেন। অবশেষে তিনি বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করে দাতা সংস্থা, ব্যবসায়ীক ফোরাম ও ন্যায্য বাণিজ্যের ফোরামের সাথে সরাসরি বিষয়টি আলোচনা করেন এবং ‘কাজের বিনিময়ে সহযোগিতা’ করার বিষয়ে তার পরিকল্পনাটি তুলে ধরেন। সকলেই তার এই নতুন প্রস্তাবনার বিষয়ে সহমত প্রকাশ করেন এবং যত দ্রæত সম্ভব কার্যক্রম শুরু করার জন্য অনুরোধ করেন। বাংলাদেশে ফিরে এসে এ কার্যক্রমের উপকারভোগির শ্রেণী নির্ধারণ, কাঁচামালের সহজলভ্যতাসহ অনেকগুলো বিষয় বিবেচনা করেন। আর তখনই বাংলাদেশ থেকে হারিয়ে যাওয়া কুটির শিল্পটিকে পুনঃজীবিত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন।
বিদেশ থেকে প্রাপ্ত অর্ডারসমূহ বন্টনের সুবিধা ও সময়মত রপ্তানি কাজ নিশ্চিৎ করার লক্ষ্যে বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় অঞ্চলভিত্তিক মহিলা হস্তশিল্প সমবায় সমিতি গড়ে তোলা হয়। সারা দেশ থেকে যাচাই বাছাই সাপেক্ষে পরিবার প্রতি একজন করে সদস্যা নিয়ে সর্বমোট ৩৩টি জেলায় ২১২টি সমিতি গড়ে তোলা হয়। যার ফলে ৬,০০০ হাজার পরিবারের সদস্যগণ সকলেই এ প্রকল্পের উপকারভোগী হয়েছেন।