ঢাকা ,
বার : সোমবার
তারিখ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
বাংলা : ৯ পৌষ ১৪৩১
Dcnewsbd Facebook
Dcnewsbd Twitter

শিরোনাম :

প্রথম পাতা দেশ বীর মুক্তিযোদ্ধা ওয়াল্টার মারাকের দুর্বিষহ জীবন

বীর মুক্তিযোদ্ধা ওয়াল্টার মারাকের দুর্বিষহ জীবন

0
552

‘খাইয়া না খাইয়া আমি কোনো রকমে বাইচ্যা আছি। আমার এই বাঁচার কোনো দাম নাই!’ বলছিলেন, ক্যান্সারে আক্রান্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ওয়াল্টার মারাক।

২০১৬ সালে জুন মাসে ধরা পড়ে মরণব্যধি ক্যান্সার। তখন থেকেই শয্যাশায়ী ৭১-এর বীর সেনানী মারাক। সর্বোচ্চ সেবা পাওয়ার কথা থাকলেও এ যোদ্ধা তা পাচ্ছেন না বলে জানান।

টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর উপজেলার ৯নং অরণখোলা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের পঁচিশমাইল গ্রামের সূর্য সন্তান ওয়াল্টার মারাক। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের নায়ক এখন হতভাগ্য জীবনযাপন করছেন। ৬৮ বছর বয়সী বীর মুক্তিযোদ্ধা মারাক এখন ক্যান্সারের সাথে মরণপন যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন।

পরলোকগত পিতার সন্তান নরেন্দ্র মারাক, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের স্মারক নং- মুঃ বিঃ ম সাং টাঙ্গাইল প্রঃ ৩/১৭/২০০২/ ৮০৬৩ তাং ২৯-০১-২০১২ ইং/ ১৬-১০-১৪১৮ বাং ইস্যুকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা মারাকের সাময়িক সনদপত্র।

স্বাধীনতা যুদ্ধে জীবন বাজি রেখে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরে যুদ্ধ করেছেন মারাক। মনের গভীরে একটাই চাওয়া ছিল ‘একটি দেশ, একটি মানচিত্র-বাংলাদেশ।’ দেশ স্বাধীনও হলো।
কিন্তু ভাগ্যের নিমর্ম পরিহাসে স্বাধীনতার ৪৬ বছর পার হলেও এই যোদ্ধার জীবনের লড়াই শেষ হয়েও যেন হল না শেষ।

গলা ক্যান্সারে এক বছর যাবত ব্যয়বহুল চিকিৎসা নিয়ে নিজের বাসাকেই এখন হাসপাতাল বলে মনে করছেন তিনি। গত ২৫/০৭/২০১৬ বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক তহবিল থেকে ২ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়ে ঢাকা স্কয়ার, বঙ্গবন্ধু হাসপাতাল, মিরপুর ক্যান্সার হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। এখন অর্থের অভাবে সেই হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যেতে পারছে না। মুক্তিযোদ্ধা ভাতা তিন মাস পর পর পাওয়াতে বড় বিপাকে পড়েছেন তিনি।

খাওয়া-পড়ার চিন্তা, সকাল হলেই এনজিওর ঋণের কিস্তি, রোগীর চিকিৎসা- সব মিলিয়ে বীর সেনার সহধর্মিনী সেলিনা মানখিন চোখে অন্ধকার দেখছেন।

সেলিনা ডিসিনিউজকে জানান, ‘এ বছর মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক অফিস হতে ৩ হাজার টাকা চিকিৎসা বাবদ পেয়েছি। কিন্তু এই টাকা আমার স্বামীর চিকিৎসার জন্য কিচ্ছুই না। এ যাবত আমার ৩ লক্ষ টাকা ছাড়িয়েছে। গত ডিসেম্বর মাসে আর্থিক সহায়তার জন্য মুক্তিযোদ্ধা অফিসে দরখাস্ত করি। সভাপতি পরিমল কান্তি গোস্বামীর কাছে ফোন করলে বলেন, খবর নাই, খবর নাই।

‘আমার স্বামী মইরা গেলে খবর আইবো। তখন কী লাভ অইব?’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমার স্বামীর চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন এনজিও, আশা, গ্রামীণ, পল্লী মঙ্গল হতে ১ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েও কুলাতে পারছিনা।’

মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য চিকিৎসা ভাতা দেওয়া হয় কি না এই ব্যাপারে মধুপুর মুক্তিযোদ্ধা সংসদে গিয়ে জানা যায় অন্য কথা। সহ-সভাপতি আব্দুল রশিদ (৫৫) ডিসি নিউজকে জানান, সরকার শুধু মুখেই বলেন সব সুযোগ সুবিধা দেওয়ার কথা, কিন্তু মাসিক ১০ হাজার ভাতা ছাড়া আমরা আর কোনো সুযোগই পাইনা।

রশিদ বলেন, এক জন সরকারী পিয়নের বেতনইতো ১৫ হাজার টাকা। আর আমার মুক্তিযোদ্ধা হয়ে সরকার থেকে কি পাচ্ছি?

একজন মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হালিম (৬০) বলেন, ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধারা সবাই গরীব। আমাদের বছরে চিকিৎসার জন্য অনেক অর্থের প্রয়োজন। আমরা নিজেদের টাকা দিয়েই চিকিৎসাগুলো নিচ্ছি। আসলে এই সময়ে ওয়াল্টারের জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন ছিল, কিন্তু আমাদের করার কিছুই নেই।

মধুপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রমেন্দ্র নাথ বিশ্বাসের সাথে ফোনে কথা বলে জানা যায়, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ হতে তিন থেকে চার হাজার টাকা সর্বোচ্চ দেওয়া যায়। এর বেশি প্রয়োজন হলে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে সাহায্য পাওয়ার সুযোগ থাকে বলে তিনি ডিসিনিউজকে জানান।

আরবি/আরপি/২৫ মে, ২০১৭