শিরোনাম :
উত্তরবঙ্গে ভাওয়াল খ্রিস্টান অভিবাসন শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে (১৯২০-২০২০) উদাস পথিকের কবিতা
আমার শৈশবটা ছিলো
উদাস পথিক
আমার শৈশবটা ছিলো
আনন্দ-বেদনার সংমিশ্রণে ভরা
জোর বাতাস এলেই আমরাও দৌঁড়াতাম
বাতাসের মতো করে- আম-বেল-তাল কুড়ানোর মোহে।
পাকা-ধানের শিষ কুড়াতাম বাড়তি আয়ের লোভে
পূজা-পার্বণ, চৈত্র-সংক্রান্তি আর ঈদ-বড়দিনে
খুব সামান্য পাওনাতেই সন্তুষ্ট থাকতে হতো সবাইকে।
আকা-বাঁকা আর ধূলা-বালির মেঠো পথ ধরে
আমরা যেতাম দল বেঁধে, বিদ্যালাভের তাগিদে
বই-খাতা-পেন্সিলের যোগাড় করতে বয়ে যেতো বেলা
পোষাক-আশাকের জৌলুস বলতে বাড়তি থাকতো শার্ট।
ইচ্ছে হলেই সাঁতার দিতাম
নদী-পুকুর-খালে, দু’চারটে মাছ পেয়ে যেতাম
বরাদ ভালো হলে, দিন শেষে ঘরে ফিরতাম
গরু-ছাগল, গবাদি পশুপাল সাথে নিয়ে।
আমাদের স্থান হতো- সন্ধ্যাকালে
বাপ, কাকা-জ্যাঠা-দাদার কড়া নজরে
প্রার্থনা আর গল্পকথার আসর হতো নিঃশব্দ-নিশ্চুপভাবে।
আমাদের দিন শেষ হতো
দূত সংবাদ প্রার্থনা বলে; এরপর জপমালা প্রার্থনা
কুপিবাতির নিচে আলো-আধারি পরিবেশে পড়াশুনা
তারপর বইপত্র মাচায় রেখে রাত্রিকালীন আহার;
মাদুর পেতে মাটিতে শয়ন, শান্তিতে বিশ্রাম;
অপেক্ষার শেষ নতুন দিনের শুরু।
আমাদের বিনোদন বলতে
পুরনো একটি বেতার যন্ত্র; বাড়ি ভরা মানুষ সবে মিলে ১৫ জন
অতিথির আগমনে, মাছ-মাংসের আয়োজন
পালা-পার্বনে বাৎসরিক জামা, রাবারের চটি কিংবা জুতা
বেড়াতে যাওয়া; তাও খুব নিকটে পিশির বাড়ি
দূরত্বের কারণে মামার বাড়ি কালে ভদ্রে।
বর্তমান জামানায়
সকাল এখন মোবাইলের রিংটোনে
দিনের বিদায় ফেসবুকের শেষ স্টেটাস দেবার পর
মধ্য রাতের জাগরণ নতুন স্টেটাস দেখার জন্য।
টিভি, মোবাইল, নেট, ফেসবুক, টুইটার
আমাদের পারস্পরিক সখ্যতা কেড়ে নিয়েছে।
বন্দি আমি নিজস্ব কারাগারে সৃজনশীলতা থেকে দূরে-বহুদূরে
আত্ম-অহমিকা, স্বার্থপরতা আর আধুনিকতা
আর ক্যারিয়ার গড়ার তাগিদে
ঈশ^র নির্ভরতা, প্রার্থনা, লোকাচার-গ্রামীণ নিজস্ব সংস্কৃতি
সভ্যতার যাপিত দিনগুলি পরিহার করে।