ঢাকা ,
বার : শনিবার
তারিখ : ১৮ মে ২০২৪
বাংলা : ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
Dcnewsbd Facebook
Dcnewsbd Twitter

শিরোনাম :

প্রথম পাতা প্রবন্ধ করোনায় শিক্ষকতা!

করোনায় শিক্ষকতা!

0
552

সুমী রোজারিও

কোভিড-১৯ মহামারী জনিত অবস্থায় পুরো বিশ^ আজ থমকে গেছে। স্থবির হয়ে পড়েছে মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা। দেশ জুড়ে শুধু হাহাকার। মৃত্যু ঝুঁকি ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। একদিকে সংক্রমিত হওয়ার ভয়, অন্যদিকে মৌলিক চাহিদা পূরণের আপ্রাণ চেষ্টা। কি করবে লোকজন, কিভাবে এ পরিস্থিতি সামাল দিবে মানুষ। চলছে লকডাউন, বাড়ছে লকডাউন। সকল অফিস আদালত সীমিত পরিসরে চলছে।

কিন্তু এ এক আজব পৃথিবী! যেখানে লকডাউন নয় চলছে শো-ডাউন। এটা শিল্প কারখানা নাকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান? ঠিক বুঝতে পারছি না। অফিস সময়সূচীতে নেই কোন পরিবর্তন কিংবা প্রতিষ্ঠান থেকে নেই কোন পরিবহন ব্যবস্থা। প্রতিষ্ঠান প্রধানগণ অধস্তন কর্মীদের জীবন ঝুঁকির কথা বিবেচনা করছেন না। আসলে কি করে বিবেচনা করবেন মানুষ নিজে যতক্ষণ সমস্যায় না পড়ে ততক্ষণ অন্যের সমস্যা উপলব্ধি করতে পারে না। প্রতিষ্ঠানের কত কর্মী কত দূর দূরান্ত থেকে জীবিকার প্রয়োজনে জীবন ঝুঁকি নিয়ে সময়মত অফিস করছে সে বিষয়টা আমাদের উপর মহল খুব একটা আমল দিচ্ছে না।

একটি প্রতিষ্ঠান মূলত গোটা দেশের প্রতিচ্ছবি। আমাদের দেশের বর্তমান অবস্থা আর আমার কর্মরত প্রতিষ্ঠানের অবস্থা হুবুহু যেন একই রকম ভাবে চলছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্যতিত বাকি সবই উন্মুক্ত, চলছে প্রয়োজন অনুযায়ী। যে পেশাকে সব থেকে বেশি মর্যাদার আসনে বসানো হয় সে পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিরা আজ সব থেকে বেশি অমর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপন করছে। বর্তমান পরিস্থিতি এমন এক অবস্থার সৃষ্টি করেছে যেন সবই প্রয়োজন শুধু শিক্ষা ছাড়া। তাই তো শিক্ষা ব্যবস্থা স্থবির হয়ে পড়েছে। এই স্থবিরতা জাতির মেরুদন্ড ভেঙ্গে যাওয়ার সামিল। আর আমাদের বর্তমান প্রেক্ষাপট সে বিষয়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

আমি পেশায় একজন শিক্ষক। শুধু মুখেই শোনা যায় শিক্ষকতা একটি মহান পেশা। কিন্তু বাস্তব চিত্র পুরোটাই ভিন্ন। যারা শিক্ষকতার সাথে জড়িত তাদেরও ব্যক্তিগত জীবন আছে, রয়েছে জীবিকা অর্জনের তাগিদ। শিক্ষকদের কাছ থেকে প্রতিষ্ঠান প্রত্যাশা করে শতভাগ বিনিময়ে শিক্ষকগণ পাবেন সিকি ভাগ। তাদের পারিশ্রমিক হবে ঘন্টা হিসেবে মজুরি। শিক্ষার্থী নেই মানেই শিক্ষকদের কোন কাজ নেই। এমনটাই সকলের ধারণা। কিন্তু শিক্ষক হল আজীবনের শিক্ষার্থী। কারণ তাকে সব সময় পড়তে হয়, জানতে হয় নানা তথ্য। শিক্ষার্থীদের ফলপ্রসু শিখনে সহায়তা করার জন্য তাকে সব সময় পড়াশোনার মধ্যে থাকতে হয়। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের শিখন দক্ষতা যাচাই করা, শিখন দক্ষতার মূল্যায়ন করা, সহশিক্ষাক্রমিক কার্যক্রম ইত্যাদি বিভিন্ন কাজের সাথে সম্পৃক্ত থাকতে হয়। এ সকল কাজের বাইরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আরোপিত কাজও করতে হয়। কিন্তু ক্লাশ নেওয়া ছাড়া বাকি কাজ কর্তৃপক্ষের নজরে ধরা পড়ে না। ধরা পড়বে কিভাবে? যারা শিক্ষকদের পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন তারা নিজেরাই জানেন না কী কাজ? আসলে উপযুক্ত ক্ষেত্রে উপযুক্ত লোকের অভাব। যখন ব্যবস্থাপক নিজেই বলেন, শিক্ষকদের কোন কাজ নেই তবুও তাদেরকে বেতন দেওয়া হচ্ছে। কেন তাদের বেতন দেওয়া হবে? কোথায় আছি আমরা নিজেরাই বুঝতে পারছি না। কর্তৃপক্ষ প্রতিনিয়ত নকশা করছে কি উপায়ে বেতন কর্তন করা হবে। এ যেন এক হীরক রাজার দেশ!

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বনাম শিল্প কারখানার বেড়াজালে আমরা হিমশিম খাচ্ছি। নিজেদের টিকে থাকার লড়াই চলছে অবিরাম। নিজেদের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমান দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে শিক্ষকগণ সরাসরি স্কুল কলেজে না গিয়েও অনলাইন ক্লাশ পরিচালনা করছে। যারা প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ ছিল না তারাও আজ নিজেদের দক্ষ করেছে। নিয়মিত অনলাইন ক্লাশ পরিচালনা করছে। এত সব করেও কোন লাভ নেই। তবুও সকলের কাছ থেকে শুনতে হয় শিক্ষকদের কোন কাজ নেই, বসে বসে বেতন পাচ্ছে। একই প্রতিষ্ঠানে মাল্টি কালচার থাকলে খুব সমস্যার সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ এক প্রতিষ্ঠানে দুই ধরনের কার্যক্রম চলমান থাকলে কর্মীরা অসুবিধায় পড়ে। শিক্ষা ও শিল্প কর্মকান্ড একই নিয়মে চলে না। দুটো সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। এ সকল কাজের সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা বিশেষত শিক্ষা সংশ্লিষ্ট যারা, তারা প্রতিষ্ঠানের নীতি নির্ধারকদের মনগড়া নিয়মের ফাঁদে আটকা পড়ে যায়। পোহাতে হয় নানা রকম ভোগান্তি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা এক সময় নিরাপদ চাকরি করলেও বর্তমানে তারাই অর্থনৈতিক দিক দিয়ে সব থেকে বেশি অনিরাপদ। চাকরি নামের বস্তুটি ঝুলে আছে অনেক উপরে। যা ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছে ক্রমশ।

কর্মীরাই হল প্রতিষ্ঠানের প্রাণ। আর কর্মীদের দক্ষ ও সঠিক কাজের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান তার নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছায়। তাই কর্মীদেরকে প্রেষণা দিতে হয়। কেননা প্রেষণা যত দেওয়া হবে কর্মীদের মনোবল তত বৃদ্ধি পাবে। তাদের মনোবল বৃদ্ধি পাওয়া মানে কাজের গতি বৃদ্ধি। আর কাজের গতি বৃদ্ধি মানেই প্রতিষ্ঠানের কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছানো। যদিও করোনা পরিস্থিতি মানুষকে বুঝিয়ে দিচ্ছে কঠিন বাস্তবতা তবুও প্রতিষ্ঠানের শ্রম-ব্যবস্থাপনা সম্পর্কের উন্নয়নের মাধ্যমে কর্মী তথা প্রতিষ্ঠানকে টিকিয়ে রাখতে হবে। এতে করে পরিবার, সমাজ, প্রতিষ্ঠান এবং গোটা দেশ বাঁচবে।