ঢাকা ,
বার : শনিবার
তারিখ : ১৮ মে ২০২৪
বাংলা : ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
Dcnewsbd Facebook
Dcnewsbd Twitter

শিরোনাম :

প্রথম পাতা দেশ ইউরোপ-আমেরিকায় অমিক্রনের ঢেউ, রেকর্ড সংখ্যায় সংক্রমণ

ইউরোপ-আমেরিকায় অমিক্রনের ঢেউ, রেকর্ড সংখ্যায় সংক্রমণ

0
442

সারা পৃথিবীতে এখন দেখা যাচ্ছে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন অমিক্রন নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাসের এই ভ্যারিয়েন্টটি অন্তত ৩২টি মিউটেশন (জিনগত গঠনের পরিবর্তন) ঘটিয়েছে – যার বৈজ্ঞানিক নাম বি.১.১.৫২৯।

অমিক্রন নিয়ে বিজ্ঞানীরা যে কারণে সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন তা হলো: এটি অত্যন্ত দ্রুত এবং সহজে ছড়াতে পারে এবং মানবদেহের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থাকে এড়াতে পারে – যার ফলে এর বিরুদ্ধে টিকা কম কার্যকর হবে বলে মনে করা হচ্ছে ।

করোনাভাইরাস যত সহজে ছড়াবে, ততই তাতে আক্রান্তের সংখ্যাও বেশি হবে – আর এর ফলে কোভিড-১৯এ গুরুতর অসুস্থ হওয়া ও মৃত্যুর সংখ্যাও ততই বাড়তে থাকবে।

করোনাভাইরাস মহামারি শুরুর পর হতে এপর্যন্ত এক দিনে সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় কোভিড সংক্রমণ শনাক্তের রেকর্ড হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র এবং কয়েকটি ইউরোপীয় দেশে।

বিশ্ব জুড়ে অমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের অব্যাহত বিস্তার নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে সোমবার যুক্তরাষ্ট্রে ৪ লাখ ৪০ হাজার নতুন সংক্রমণ শনাক্ত করার তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। অন্যদিকে ফ্রান্স, ইতালি, গ্রীস, পর্তুগাল এবং ইংল্যান্ডেও সোমবার রেকর্ড সংখ্যায় নতুন সংক্রমণ শনাক্ত করা হয়।

কর্মকর্তারা অবশ্য বলছেন, ক্রিসমাসের ছুটির কারণে কোভিড সংক্রমণের তথ্য আসতে দেরি হচ্ছে, সোমবার রেকর্ড সংখ্যায় নতুন সংক্রমণের তথ্য এসে পৌঁছানোর কারণ হয়তো সেটি।

বিভিন্ন গবেষণায় অবশ্য বলা হচ্ছ, এর আগের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় অমিক্রন অনেক দুর্বল। কিন্তু তারপরও আশংকা থেকে যাচ্ছে, যেরকম হারে অমিক্রন সংক্রমণ ঘটছে, তাতে হাসপাতালগুলো রোগীর চাপে হিমসিম খেতে পারে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও) হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে, অমিক্রন এখনো এক মারাত্মক ঝুঁকি।

পোল্যান্ডে বুধবারের হিসেবে একদিনে কোভিড সংক্রান্ত কারণে ৭৯৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। কোভিডের চতুর্থ ঢেউয়ে সেদেশে এটাই একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর সংখ্যা। যারা মারা গেছে, তাদের তিন চতুর্থাংশেরও বেশি কোন টিকা নেয়নি।

যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) বলছে, ২৭ ডিসেম্বর সেদেশে পরীক্ষায় কোভিডে শনাক্ত মানুষের সংখ্যা আরও ৪ লাখ ৪১ হাজার ২৭৮ জন বেড়েছে। এটি সিডিসির হিসেবে এ পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্তের সংখ্যা।

সিডিসির একটি পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে, মার্কিন গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, গত সাতদিনের গড় হিসেব করলে, প্রতিদিন যত মানুষের কোভিড ধরা পড়েছে, এত বেশি এ বছরের জানুয়ারীর পর আর দেখা যায়নি।

তবে সিডিসির একজন মুখপাত্র বলছেন, সংক্রমনের যে সর্বশেষ সংখ্যা অনুমান করা হচ্ছে, তা হয়তো আসল সংক্রমণের চেয়ে বেশি, কারণ ক্রিসমাসের সময় অনেক পরীক্ষা কেন্দ্র বন্ধ ছিল। আর ছুটির কারণে অনেক তথ্য দেরিতে এসে পৌঁছাচ্ছে। নতুন বছরে হয়তো এই সংখ্যা স্থিতিশীল হয়ে আসবে।

যুক্তরাষ্ট্র এখন ইউরোপের আরও কিছু দেশের জন্য ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এর মধ্যে রয়েছে মল্টা, মোলডোভা এবং সুইডেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মঙ্গলবার এক রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, যাতে বলা হয়েছে ইউরোপে ২৬ ডিসেম্বরের আগের সপ্তাহে কোভিডের সব ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ ৫৭ শতাংশ বেড়েছে, আর আমেরিকায় বেড়েছে ৩০ শতাংশ।

মঙ্গলবার ফ্রান্স জানিয়েছে সেদেশে একদিনে সর্বোচ্চ ১ লাখ ৭৯ হাজার ৮০৭টি নতুন সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। ফ্রান্সের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে, জানুয়ারীর শুরুর দিকে ফ্রান্সে দৈনিক সংক্রমণ আড়াই লাখে পৌঁছাতে পারে।

ফ্রান্সের হাসপাতালগুলের ফেডারেশন বলেছে, সবচেয়ে খারাপ সময়টা হয়তো এখনো আসার বাকী আছে।

আরও কয়েকটি ইউরোপীয় দেশও রেকর্ড সংখ্যায় দৈনিক সংক্রমণের খবর দিয়েছে;

  • ইতালিতে দৈনিক সংক্রমণ এখন ৭৮ হাজারে পৌঁছেছে। মহামারি শুরুর পর হতে এটি ইতালিতে নতুন রেকর্ড। সেখানে গতকাল মারা গেছে ২০২ জন। এ নিয়ে ইতালিতে এপর্যন্ত মারা গেল ১ লাখ ৩৬ হাজার ৭৫৩ জন।
  • পর্তুগালে গতকাল রেকর্ড করা হয় ১৭ হাজার ১৭২টি নতুন সংক্রমণ।
  • গ্রীসে দৈনিক সংক্রমণ ২১ হাজার ছাড়িয়ে যাওয়ার পর স্বাস্থ্য মন্ত্রী সবাইকে শান্তভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলার আহ্বান জানিয়েছেন।
  • ইংল্যান্ডের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ গতকাল একদিনে ১ লাখ ১৭ হাজার নতুন সংক্রমণের হিসেব দিয়েছে, যা এক নতুন রেকর্ড। ক্রিসমাসের কারণে পুরো যুক্তরাজ্যের সংক্রমণের তথ্য পাওয়া যায়নি।
  • কোভিড পরিস্থিতির কারণে প্যারিস, লন্ডন এবং বার্লিন তাদের নববর্ষ উদযাপনের উৎসব বাতিল করেছে। তবে কোন কোন দেশের সরকার এখনো নতুন করে দেশজুড়ে বিধিনিষেধ জারিতে তেমন উৎসাহী নয়।
  • ফ্রান্স এবং ইংল্যান্ডে জনগণকে তাদের ‘সাধারণ বোধ-বুদ্ধি’ প্রয়োগ করে চলাফেরা করতে বলা হয়েছে। মাদ্রিদের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের নববর্ষের পরিকল্পনা বহাল আছে, তবে লোকসমাগম সীমিত রেখে তা করা হবে। অন্যদিকে ইতালি ঘরের বাইরের সব অনুষ্ঠান নিষিদ্ধ করেছে এবং নৈশক্লাবগুলো বন্ধ করে দিয়েছে।

লাভের মুখ দেখার আগেই অমিক্রনের ধাক্কা
করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হওয়ার পর বিমান পরিবহন সংস্থাগুলো যখন ভাবছিল, তারা আবার স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরতে পারবে এবং লাভের মুখ দেখতে যাচ্ছে, সেই সময়ে দেখা দিল অমিক্রন ধরন। বড়দিনের আগের দিন শুধু নিউইয়র্কে ৪৯ হাজারের বেশি লোকের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়েছে, যার প্রভাব পড়েছে বিমান পরিবহনে।
ইউনাইটেড এয়ারলাইনস (ইউএএল) জানিয়েছে, গত সপ্তাহে সংস্থাটির শত শত ফ্লাইট বাতিল করতে হয়েছে। এর কারণ, নির্ধারিত রুটে নিরাপদ ভ্রমণের জন্য প্রয়োজনীয় ক্রু ছিল না তাদের। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, দেশব্যাপী অমিক্রনের সংক্রমণে বিমান ক্রু ও পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত মানুষের ওপর প্রভাব পড়েছে।
দেশটির অপর বিমান সংস্থা ডেলটা এয়ারলাইনস একই কথা জানিয়েছে। ফ্লাইটের জন্য যাত্রীদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে এক বিবৃতিতে ডেলটা এয়ার কর্তৃপক্ষ বলেছে, ‘যাত্রীদের দ্রুত ও নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য কঠোর পরিশ্রম করছেন ডেলটার কর্মীরা।’

আকাশপথে ভ্রমণ পুনরায় বেড়েছে
অমিক্রনের সংক্রমণ শুরুর আগে করোনার প্রকোপ কিছুটা কমায় তার ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে অবসরকালীন আকাশভ্রমণে। যুক্তরাষ্ট্রের ট্রান্সপোর্টেশন সিকিউরিটি অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (টিএসএ) হিসাবে, বড়দিনকালীন শুক্র ও শনিবারের অবসর ভ্রমণের পরিমাণ এখন কোভিড–পূর্ববর্তী সময়ের কাছাকাছি পৌঁছেছে।
আমেরিকান অটোমোবাইল অ্যাসোসিয়েশন (এএএ) জানিয়েছে, কোভিড-১৯–পূর্ববর্তী ২০১৯ সালে বড়দিন ও নববর্ষের সপ্তাহে প্রায় ১২ কোটি (১১৯ মিলিয়ন) মার্কিন নাগরিক ভ্রমণ করেন। এ বছর এ সংখ্যা প্রায় ১১ কোটি (১০৯ মিলিয়নের বেশি)। তাঁদের মধ্যে অন্তত ৬৪ লাখ (৬.৪ মিলিয়ন) যাত্রী আকাশপথে ভ্রমণ করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় তিন গুণ। অতিরিক্ত এই যাত্রীর চাপও চলমান ভ্রমণজট সৃষ্টির কারণ।

শ্রমিক ঘাটতি
করোনাভাইরাসের কারণে এমনিতে বিমান পরিবহন সংস্থাগুলো পর্যাপ্ত ক্রু খুঁজে পাচ্ছে না। এর মধ্যে অমিক্রনের সংক্রমণ সেই কর্মী ঘাটতিকে আরও তীব্র করে তুলছে। কর্মী ঘাটতির কারণে বিমান ক্রুদের অতিরিক্ত কাজ করতে হয়, কিন্তু তারপরও বেশির ভাগ ফ্লাইট বাতিল হয়ে যায়।
বিভিন্ন এয়ারলাইনসের কর্মকর্তারা বলছেন, অনেক পাইলট ও বিমানসেবক অভিযোগ জানিয়েছেন, কাজ করার সময় সরকারনির্দেশিত নিয়মানুসারে প্রয়োজনীয় হোটেলকক্ষ পাওয়া যাচ্ছে না। এ ছাড়া কর্মীর সংখ্যা কম থাকায় তাদের সদস্যরা বড়দিন উৎসবের মতো বড় অনুষ্ঠানে চাপে পড়েছেন। (প্রথম আলো, বিবিসি বাংলা)