ঢাকা ,
বার : শনিবার
তারিখ : ১৮ মে ২০২৪
বাংলা : ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
Dcnewsbd Facebook
Dcnewsbd Twitter

শিরোনাম :

প্রথম পাতা সম্পাদকীয় উপ-সম্পাদকীয় “তোমরা শ্রান্ত যারা, বোঝার ভারে ক্লান্ত যারা, তোমরা সকলেই আমার কাছে এসো...

“তোমরা শ্রান্ত যারা, বোঝার ভারে ক্লান্ত যারা, তোমরা সকলেই আমার কাছে এসো : আমি তোমাদের আরাম দেব।”

সাধারণকালের চতুর্দশ রোববারের উপদেশ

0
735

|| কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিও, সিএসসি ||

আজকের মঙ্গলসমাচার পাঠে যিশু বলেন: “তোমরা শ্রান্ত যারা, বোঝার ভারে ক্লান্ত যারা, তোমরা সকলেই আমার কাছে এসো ঃ আমি তোমাদের আরাম দেব।” বর্তমান করোনা-ভাইরাসের দুর্যোগকালে যিশুর এই কথা যখন শুনি তখন আমরা সান্ত্বনা পাই, বিশ্বাস বেড়ে যায়, ভরসা বৃদ্ধি পায়, বোঝা লাঘব বা লঘুভার হয়ে যায়, প্রাণে আরাম বোধ করি।  আর এই সব কারণে অন্তরে আনন্দ অনুভব করি। এ হচ্ছে দীনভক্তজনের আনন্দ।  এই আনন্দে আমরা প্রভু যিশুর ধন্যবাদ করি, তাঁর বন্দনা করি ও তাঁর প্রশংসা করি। 

স্বর্গীয় পিতার প্রতি যিশুরও সেই একই অনভূতি ছিল।  দীনজনেরা যখন যিশুর বাণী শুনেছিল তখন যিশুও আনন্দের আতিশয্যে বলেছেন: “হে পিতা, স্বর্গমর্তের প্রভু, আমি তোমার বন্দনা করি, কারণ স্বর্গরাজ্যের এই সমস্ত কথা তুমি জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান লোকদের কাছে গোপন রেখেছ আর প্রকাশ করেছ নিতান্ত শিশুদেরই কাছে। হ্যা, পিতা এই তো তুমি চেয়েছিলে, এতেই ছিল তোমার আনন্দ!”  শিশুর মতো দীনজন হয়ে যখন আমরা যিশুর ঐশরাজ্যের বাণী গ্রহণ করি তখন স্বর্গীয় পিতা আনন্দ পান এবং যিশু আমাদের হয়ে পিতার বন্দনা করেন। 

প্রিয়জনেরা, করোনার মহামারি দুর্যোগে, কতভাবে আমরা উপলব্ধি করেছি আমরা কত দুর্বল ও শক্তিহীন; আমাদের নিজস্ব জ্ঞান ও বুদ্ধির অভাব; আমরা কতো অসহায়, অক্ষম ও অসমর্থ, ভীত ও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছি; উপলব্ধি করেছি সম্পর্ক ও যোগাযোগ শূণ্যতা এবং বন্দীদশা; আমাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে হা-হুতাশ, হতাশা ও নিরাশা, প্রভৃতি আরও অনেক অনভূতি ও অভিজ্ঞতা।  ঠিক সেই কঠিন সময়ে আমরা অনেকেই যিশুর আহ্বান শুনেছি: “এসো, যারা ক্লান্ত-শ্রান্ত-ভারাক্রান্ত, তোমরা আমার কাছে এসো।” যিশুর এই ডাকে সাড়া দিয়ে প্রভুর দীনজন হয়ে, তাঁর প্রতি ভরসা ও আস্থা রেখে আমরা পথ চলেছি; তথাকথিত “সামাজিক দূরত্ব” ভুলে গিয়ে পরিবারে সকলে একত্রিত হয়েছি, সময় কাটিয়েছি একসঙ্গে, প্রার্থনা করেছি একসঙ্গে প্রতিদিন এবং দিনে বহুবার; অনলাইনে পরিবারে থেকে দেশে-বিদেশে অনেকে মিলে খ্রিষ্টযাগে অংশগ্রহণ করেছি; ঘরে বসে খ্রিষ্টযাগে যোগদান করার অপূর্ব সুযোগ পেয়ে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছি, প্রভুর প্রশংসা-বাণী উচ্চারণ করেছি, বারবার “আমেন” বলে সমর্থন জানিয়েছি। 

আমাদের প্রায় প্রতিটি ঘর হয়ে উঠেছে ঐশ-উপাসনালয়, খ্রিষ্টসাধনালয় ও মানব-সেবালয়।  ঘরে ঘরে উপলব্ধি হয়েছে খ্রিষ্টমণ্ডলী, যা ক্ষুদ্রাকারে পরিবারে গৃহমণ্ডলীতে উপস্থিত।  তাছাড়া আমরা দেখেছি ঈশ্বরের অলৌকিক কীর্তিসমূহ; ঈশ্বর দান করেছেন তাঁর করুণা, দয়া, ক্ষমা ও ভালবাসা; অন্তরে উপলব্ধি করেছি জীবন পরিবর্তনের আহ্বান; ঘরে ও হাসপাতালে কতো অসুস্থ ব্যক্তি, ঘরে ঘরে অনেকের একত্রিত প্রার্থনার ফলে সুস্থ হয়েছে; কঠিন ও অশুভ সময়ে পেয়েছি অনেক আশীর্বাদ ও মঙ্গল।  তাই দীনজনের অন্তর নিয়ে আমরা যিশুর মতো বলতে পারি: “আমি তোমার বন্দনা করি, তোমার প্রশংসা করি কারণ এই দীনজন, আমার কাছে তুমি নিজেকে প্রকাশ করেছ।” 

প্রিয়জনেরা, বিগত অভিজ্ঞতার প্রেক্ষিতে আপনাদের নিকট কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করতে চাই। 

প্রথম: করোনা ভাইরাসের দুর্যোগের সমপ্তি সপ্তাহ, মাস ও এমনকি বছর দিয়েও হয়তো নির্ধারণ করা যাবে না।  অতএব এই অবস্থায় আমাদের নিজের ও অপরের জীবনকে রক্ষা করতে হবে ও জীবিকা-নির্বাহ করতে হবে। এ ব্যাপারে আমাদের সবাইকে সচেতন ও সক্রিয় হয়ে জীবন যাপন করতে হবে।

দ্বিতীয়: খ্রিষ্টবিশ্বাসীরূপে, প্রভু যিশুর প্রতি আরও বিশ্বাস ও আশা, আস্থা ও ভরসা নিয়ে, ঈশ্বরের ইচ্ছা জেনে ও তার প্রতি আত্মসমর্পণ কওে, আমাদের প্রতিদিনকার খ্রিষ্টীয় জীবন যাপন করতে হবে। 

তৃতীয়: আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ও সরকার কর্তৃক জাতীয় পর্যায়ে প্রদত্ত স্বাস্থ্য-বিধি ও নির্দেশনা মেনে চলে, স্বাভাবিক জীবন যাপনের দিকে অগ্রসর হতে হবে।  সামনের দিকে তাকিয়ে পথ চলতে হবে।

চতুর্থ: “সামাজিক দূরত্ব” নয় কিন্তু “দৈহিক দূরত্ব” বজায় রেখে “সামাজিক সম্পর্ক” বা “সামাজিক যোগাযোগ” আরও জোরদার করতে হবে।  “সামাজিক দূরত্ব” রাখতে গিয়ে আমরা সামাজিক সম্পর্ক, মানবিক সম্পর্ক, মাণ্ডলিক সম্পর্ক, মিলন-সমাজের সম্পর্ক থেকে আমরা অনেক দূরে সরে গেছি, যা আমাদের জন্য মোটেই ভাল নয়। 

পঞ্চম: স্বাস্থ্য-বিধি রক্ষা করে ও মেনে চলে, গির্জায় আবার ফিরে আসুন।  প্রিয়জনেরা, খ্রিষ্টযাগ হচ্ছে যিশুর সাথে বাণী ও খ্রিষ্টপ্রসাদের মধ্য দিয়ে মিলন-সম্পর্কের শ্রেষ্ঠ উপায়।  খ্রিষ্টযাগের সময়টি হচ্ছে মানবিক, মাণ্ডলিক বা খ্রিষ্টসামাজিক ও আধ্যাত্মিক মিলন ও সম্পর্ক স্থাপনের ঐশ-অনুগ্রহপুষ্ট সময়, যা অনলাইন-খ্রিষ্টযাগ দিতে পারে না।  অনলাইন-খ্রিষ্টযাগ, মন্দের ভাল একটি উপায়, যা আমরা সবাই লকডাউনের সময় উপলব্ধি করেছি।  যারা অচল, অসুস্থ ও অপারগ তাদের জন্য অনলাইন-খ্রিষ্টযাগে যোগ দেওয়া আবশ্যকীয় হতে পারে।  কিন্তু যারা সচল, সুস্থ ও অপারগ নয়, এবং নিজস্ব এলাকায় কোন নিষেধাজ্ঞা নেই, এমন ব্যাক্তিদের উৎসাহিত করছি, খ্রিষ্টযাগ-অনুষ্ঠানে শারীরিকভাবে উপস্থিত থেকে যোগদান করার জন্য।  রবিবারে মহাপর্ব দিনে খ্রিষ্টযাগে যোগদান করা আমাদের প্রথম কর্তব্য।  যদি বিশেষ কারণে ঐ দিন সম্ভব না হয় তাহলে, অন্ততঃ সাময়িকভাবে সপ্তাহের যেকোন দিনে তা করা যেতে পারে। 

একটি মধ্যম বয়সী দম্পতি সাক্ষ্য দিয়ে এই কথা বলেছেন: “মার্চ মাসের ২২ তারিখ থেকে খ্রিষ্টযাগে অংশগ্রহণ করিনি। আজ অনেক ধন্যবাদ ও প্রশংসা করলাম; যিশুকে অন্তরে পেয়ে মনটা অনেক হালকা হয়ে গেল।  নতুন এক আনন্দ নিয়ে প্রভুর ঘরে প্রবেশ করলাম।  যিশু আমাদের কত কৃপা করেছেন; আমরা যেন সবকাজে তাকে মনে রাখতে পরি।”

অতএব নিয়মিতভাবে, খ্রিষ্টযাগ-অনুষ্ঠানে যোগদান করে সাক্রামেন্তীয় অনুগ্রহ লাভ করার জন্য আপনাদেরকে অনুরোধ জানাই।  উপাসনালয় খোলা।  আসুন উপাসনালয়ে গিয়ে খ্রিষ্টযাগে যোগদান করি।  খ্রিষ্টপ্রসাদে প্রভু যিশুর সাথে সংস্কারীয় মিলন ও সম্পর্কের আনন্দ ও শান্তি অনুভব করি।  আমেন। 

৫ জুলাই, ২০২০

আরো পড়ুন:

সাধারণকালের ত্রয়োদশ রোববারের উপদেশ