ঢাকা ,
বার : শনিবার
তারিখ : ১৮ মে ২০২৪
বাংলা : ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
Dcnewsbd Facebook
Dcnewsbd Twitter

শিরোনাম :

প্রথম পাতা ফিচার নারী উদ্যোক্তা মার্গারেট নিবেদিতা’র গল্প

নারী উদ্যোক্তা মার্গারেট নিবেদিতা’র গল্প

0
830

ফিচার ।। ডিসিনিউজ

বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা এবং করোনাকালীন সময়ে অর্থনৈতিক সংকট সারা বিশ্বের জন্য একটি অশনি সংকেত। নারী-পুরুষ উভয়ই মোকাবেলা করছে এমন পরিস্থিতি। এই সংকটের অনেকেই ঘুরে দাঁড়ানো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ের মাধ্যমে উদ্যোগক্তা হওয়ার লড়াইয়ে অংশিদার হচ্ছে। বাংলাদেশের স্বনামধন্য সমবায় প্রতিষ্ঠান ঢাকা ক্রেডিট এই মন্দাবস্তায় সদস্যদের আর্থিকভাবে ঘুড়ে দাঁড়ানোয় ব্যাপক কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। বিশেষ করে উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে ঢাকা ক্রেডিটের অবদান অপরিসীম।

নারীরাও পিছিয়ে নেই নিজেদেরকে অর্থনৈতিক সাবলম্বি হিসেবে গড়ে তুলতে। তেমনি একজন হলেন মার্গারেট নিবেদিতা রয়। বর্তমান এই চ্যালেঞ্জের সময়ে তিনি কিভাবে লড়াই করে একজন উদ্যোক্তা হয়ে উঠলেন সেই গল্প ডিসিনিউজের বার্তা সম্পাদকের সাথে আলাপচারিতায় বললেন তিনি।

বার্তা সম্পাদক: সরকারি-বেসরকারি চাকুরির চেষ্টা না করে, কেন উদ্যোক্তা হলেন এবং আপনার ব্যবসার ধরন কি?

মার্গারেট: আমি পড়াশোনার পাশাপাশি সবসময় নিজে কিছু করি সেই ভাবনা নিয়ে বড় হয়েছি, চাকুরি করে ভালো থাকা যায় সত্য, কিন্তু আমাদের যেহেতু পারিবারিক ব্যবসা (ম্যাক কম্পিউটার সিস্টেমস্) দীর্ঘ দিনের তাই ব্যবসার মাধ্যমে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে বেশি পছন্দ করি। চাকুরির সুযোগ পাওয়া যেহেতু কঠিন বিষয় তাই নিজে উদ্যোক্তা হওয়ার চেষ্টা করেছি।

উদ্যোক্তা হওয়ার কারণ আমি অনেকবার প্রতিবেশী দেশগুলোতে গিয়েছি, অনেকে সেখান থেকে কাপড় এনে দেশে বিক্রি করে। আমি চিন্তা করলাম আমাদের দেশের কাপড় সারা বিশ্বে যায় এবং আমিও করতে পারি এই ব্যবসা। সেই চিন্তা থেকে আমি ব্যবসাটা শুরু করলাম।

আমার ব্যবসার ধরন অনলাইন-এ এক্সপোর্ট কোয়ালিটি কাপড়ের ব্যবসা এবং ইন্দিরা রোডে আমার একটি শো-রুমও রয়েছে।

বার্তা সম্পাদক: কেন আপনি কাপড়ের ব্যবসায় আসলেন? কীভাবে পরিকল্পনা করেছেন?

মার্গারেট: বর্তমান সময়ে চাকুরি ব্যবস্থায় অনেক প্রতিযোগিতা। যার ফলে আমি নিজেই আত্মকর্মসংস্থান খুঁজে নিয়েছি। যেকোন ব্যবসা করতে গেলে ওই ব্যবসা নিয়ে একটু পরিকল্পনা করতে হয়। আমাদের পারিবারিক ব্যবসা থাকায় এই দিকটা আমি আসতে অনুপ্রাণিত হয়েছি। বর্তমানে অনলাইন ব্যবসাটা অনেক এগিয়ে আছে। আর এই কাপড়ের ব্যবসা অনলাইন-এ খুব ভালো পরিমাণে সাড়া দিয়েছে। কোভিড-১৯ এ মানুষ বাসা থেকে বাইরে বের হওয়াটা অনেক ঝুঁকিপূর্ণ মনে করেছে, যার ফলে অনলাইন-এ কাপড় বিক্রি করা এবং হোম ডেলিভারী সবার জন্য উপকার হিসেবে আমি মনে করি।

বার্তা সম্পাদক: উদ্যোক্তা বা ব্যবসায় আসার মূলধন সংগ্রহ করেছেন কোথায় থেকে?

মার্গারেট: এই ব্যবসার জন্য আসলে মূলধন বেশি দরকার হয়, আমি প্রথম আমার বাবার কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে কাপড়ের স্যাম্পল কালেক্ট করতে থাকি, তারপর দি খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি:, ঢাকা (ঢাকা ক্রেডিট) থেকে লোন নিই এবং প্রথম একটি ল্যাপটপ কম্পিউটার ক্রয় করি, বাকী টাকা দিয়ে আমি কাপড় কিনে শো-রুম সাজাই। এরপর আমার Online-এ বিক্রি চালু করি। FAMILY FRIENDS নামকরণ করে একটি ফেইসবুক পেইজ তৈরি করি। আমার ঠিকানা ২২ ইন্দিরা রোড, ফার্মগেট হওয়ায় অনেকে সরাসরি কাপড় কিনতে আসেন। Online Marketing করতে আমি সব ধরণের প্রশিক্ষণ নিয়েছি।

আমি আমার কাপড়ের ব্যবসা আনন্দের সাথে উপভোগ করি। আমার ব্যবসায়ের সকল প্রডাক্ট আমার নিজের পছন্দ করে সংগ্রহ করা। যার ফলে দেখছি অনলাইন এবং সরাসরি ক্রেতারা পছন্দ করছেন এবং কিনছেন।

বার্তা সম্পাদক: ঢাকা ক্রেডিট আপনাকে কীভাবে সহায়তা দিয়েছে?

মার্গারেট: আমি ঢাকা ক্রেডিট-এর কাছে কৃতজ্ঞ, কারণ আমাকে অনেক উপকার করেছে, ২০১৯ সালের ১১ জুলাই আমার একটা এক্সিডেন্ট হয়ে আমার বাম হাতের দু’টি হাঁড় ভেঙ্গে যায় এবং ২০২০-এ আমার আরো একটি অপারেশন হয়। ঢাকা ক্রেডিটে আমার স্বাস্থ্যবীমা থাকায় আমার চিকিৎসার জন্য কিছু অর্থ পেয়েছিলাম। আমি ঢাকা ক্রেডিট হতে ২০২১ সালে এক লক্ষ টাকা লোন নিই। বর্তমানে আমার আরো টাকার প্রয়োজন তাই চেষ্টা করছি আরো বেশি টাকা লোন নেবার। মূলত ঢাকা ক্রেডিট আমার ব্যবসায় মূলধন সংগ্রহের জন্য একটি বড় সহযোগিতা জায়গা।

বার্তা সম্পাদক: আপনি আপনার ব্যবসা কেমন উপভোগ করেন?

মার্গারেট: যেহেতু আমি ব্যবসায়িক পরিবারের সন্তান। ছোটবেলা থেকেই বাবাকে দেখতাম তাঁর ব্যবসা কতটা গুছিয়ে কাজ করতেন। সে থেকেই আমার ব্যবসা করার অনুপ্রেরণা আসে। আমি আমার কাপড়ের ব্যবসা আনন্দের সাথে উপভোগ করি। আমার ব্যবসায়ের সকল প্রডাক্ট আমার নিজের পছন্দ করে সংগ্রহ করা। যার ফলে দেখছি অনলাইন এবং সরাসরি ক্রেতারা পছন্দ করছেন এবং কিনছেন।

বার্তা সম্পাদক: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বিষয়ে বলুন!

মার্গারেট: এই ব্যবসা নিয়ে আমি অনেক উপরে উঠতে চাই। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আমি ট্রেনিং নিচ্ছি এবং এই ব্যবসাটা যাতে আরো ভালো কিছুতে নিয়ে যেতে পারি এর জন্য আমি দেশের বাইরে পড়াশোনা করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। যার ফলে এই কাপড়ের ব্যবসাটা আমি রপ্তানিতে নিয়ে যেতে পারি।

বার্তা সম্পাদক: যারা উদ্যোক্তা হতে চান, তাদের বিষয়ে আপনার পরামর্শ কি?

বার্তা সম্পাদক: যারা উদ্যোক্তা হতে চান, তাদের প্রথমত এই টেকনোলজি সম্পর্কে বিশেষ ধারণা থাকতে হবে। প্রথমে পেইজ খুুলতে হবে, পেইজ প্রমোট করা, বুস্টিং করা ইত্যাদি কাজে অভিজ্ঞ হতে হবে। এজন্য কম্পিউটার জ্ঞান অবশ্যই থাকতে হবে। এছাড়া সব সময় পেইজ বা ওয়েবসাইট-এ একটিভ থাকতে হবে। সর্বোপরি অবশ্যই একটি নির্দিষ্ট লক্ষে থাকতে হবে। পরিশ্রমের পাশাপাশি সততা থাকতে হবে ও সৃষ্টিকর্তার উপর নির্ভর করতে হবে। লেগে থাকলে সাফল্য আসবেই।

বার্তা সম্পাদক: আপনাকে ডিসিনিউজ ও সমবার্তা পক্ষ থেকে ধন্যবাদ।

মার্গারেট: আপনাদেরও ধন্যবাদ বিভিন্নভাবে তথ্য সম্প্রচার করে আমাদের পাশে থাকার জন্য।