ঢাকা ,
বার : শনিবার
তারিখ : ১৮ মে ২০২৪
বাংলা : ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
Dcnewsbd Facebook
Dcnewsbd Twitter

শিরোনাম :

প্রথম পাতা টিপস্ কীভাবে আর্থিক সাক্ষরতা অর্জন করবেন এবং কেন

কীভাবে আর্থিক সাক্ষরতা অর্জন করবেন এবং কেন

0
1682

জনাথ্যান গমেজ

কী করে আর্থিক বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া যায় তা বোঝার সক্ষমতাই হলো আর্থিক সাক্ষরতা। এতে আপনি আত্মবিশ্বাসের সাথে আপনার অর্থের ব্যবস্থাপনা করতে পারেন এবং আপনার সঞ্চয় বৃদ্ধি করতে পারেন।

আর্থিকভাবে সচেতন হলে আপনি আপনার আয়-উপার্জনকে একই সঙ্গে বিভিন্ন লক্ষ্য পূরণের জন্য বরাদ্দ করতে সক্ষম হবেন। কেবল চলমান ব্যয়ই নয়, এর পাশাপাশি সঞ্চয়, ঋণ পরিশোধ এবং জরুরি তহবিল গঠনের জন্যও আপনার অর্থ বন্টন করতে পারবেন। এমনকি বুঝে-শুনে অর্থ বাজারে বিনিয়োগ করতে পারবেন। ঋণ – ক্রেডিট কার্ড – বিনিয়োগের সুযোগ ইত্যাদি বিষয়গুলি নিয়ে ভালোভাবে পর্যালোচনা করার কৌশল আপনার জানা থাকবে।

আর্থিক সাক্ষরতা কেন গুরুত্বপূর্ণ এবং কীভাবে আপনি তা অর্জন করবেন ও কাজে লাগাবেন, সেই বিষয়ে এখানে আলোকপাত করা হলো।

আর্থিকভাবে সাক্ষর হওয়ার মানে কী?
আর্থিক সাক্ষরতার পাঁচটি উপাদান লক্ষ্য করুন। আর্থিকভাবে শিক্ষিত লোকেরা এই বিষয়গুলো ভালোমতো বুঝতে পারেন:
আপনার বেতন, অন্যান্য বেনিফিট এবং উৎসে কর পরিশোধসহ আপনি মোট কত টাকা উপার্জন করেন,
১. কীভাবে সঞ্চয় ও বিনিয়োগ করা যায়, জরুরি তহবিল গঠন করা যায় এবং বিভিন্ন মেয়াদি লক্ষ্যের জন্য টাকা জমানো যায়,
২. কীভাবে বীমার মাধ্যমে আপনার অর্থ ও সম্পদ সুরক্ষা করবেন এবং জালিয়াতি এড়িয়ে চলবেন,
৩. আর্থিক পরিকল্পনা অনুসরণ এবং যাচাই-বাছাই করে কেনাকাটার মাধ্যমে কীভাবে বুদ্ধিমত্তার সাথে ব্যয় করবেন,
৪. কীভাবে লাভজনক উদ্দেশ্যে ঋণগ্রহণ করা যায় এবং দায়িত্বশীলভাবে সময়মতো ক্রেডিট কার্ড ও অন্যান্য ঋণ পরিশোধের অভ্যাসের মাধ্যমে উচ্চহারে ঋণের সুদ প্রদান করা এড়ানো যায়।

আর্থিক সাক্ষরতার কিছু কার্যকরী উদাহরণ নিম্নরূপ:
* কোনো সঞ্চয় বা আমানত প্রকল্প খোলার আগে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বর্তমান অফারগুলোর মধ্যে তুলনা করে দেখেন,
* যখনই আপনার বেতন বা উপার্জন বৃদ্ধি পায় – সেক্ষেত্রে আপনি আপনার অবসর-জীবনের জন্য সঞ্চয়ের তহবিলে (রিটায়ারমেন্ট ফান্ড) নিয়মিত জমার পরিমাণ বাড়িয়ে থাকেন,
* আপনি নিয়মিত আপনার ক্রেডিট কার্ডের বিল পরীক্ষা করে দেখেন তাতে কোনো ত্রুটি আছে কিনা।
এই সমস্ত অভ্যাসগুলো আপনাকে আপনার নিজের সমৃদ্ধির পরিকল্পনাকে বাস্তবায়ন করতে এবং দীর্ঘমেয়াদে অর্থ সাশ্রয় করতে সহায়তা করে।

আর্থিক সাক্ষরতা গুরুত্বপূর্ণ কেন?
আর্থিকভাবে যারা শিক্ষিত তারা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে আর্থিক ব্যবস্থাপনা করতে পারেন। তারা কার্যকরভাবে তাদের উপার্জন থেকে তাদের লক্ষ্য ও স্বপ্নগুলো পূরণের উদ্দেশে অর্থ বরাদ্দ করেন, সঞ্চয় করেন এবং অলাভজনক উদ্দেশে ঋণ নেওয়া থেকে বিরত থাকেন বা দ্রুত ঋণ পরিশোধ করে দেন। আসুন দেখি আর্থিক সাক্ষরতা কীভাবে আপনার জীবনকে প্রভাবিত করতে পারে:

কীভাবে বাজেট করবেন তা বুঝতে পারেন: আপনার ব্যয় পরিচালনার পাশাপাশি নিয়মিত সঞ্চয় করা এবং ঋণ পরিশোধ করার জন্য আপনাকে আপনার মোট আয় জানতে হবে এবং তা কার্যকরভাবে বন্টন করতে হবে। অর্থ-ব্যবস্থাপনা সত্যিকারভাবে বোঝার প্রথম পদক্ষেপ হলো বাজেট বা অর্থ বন্টনের পরিকল্পনা তৈরি করা। একবার আপনার বাজেট তৈরি করে নিয়ে সেটি অনুসরণ করতে থাকুন এবং নিয়মিত সেই পরিকল্পনাটি পুনর্বিবেচনা করে প্রয়োজন মোতাবেক হালনাগাদ করে নিন। বাজেট তৈরির অনেকগুলো প্রচলিত পদ্ধতি রয়েছে, যেমন – শূন্য-ভিত্তিক বাজেট, একাধিক-এ্যাকাউন্ট বাজেট, এনভেলপ-সিস্টেম বা খামের ব্যবহার, ইত্যাদি। আপনি এমন একটি বাজেট পদ্ধতি বেছে নিন যেটা আপনার পক্ষে নিয়মিত অনুসরণ করা সহজ হবে।

ঋণের বিষয়ে বোঝেন এবং তার সঠিক ব্যবস্থাপনা করতে পারেন: আর্থিকভাবে সাক্ষর হওয়ার ফলে আপনি ঋণ গ্রহণের পূর্বে বিভিন্ন মেয়াদে তা পরিশোধের ক্ষেত্রে তুলনামূলক যাচাই-বাছাই করে সর্বনিম্ন সুদের হার খুঁজে নিতে পারেন। আপনি এও জানেন যে প্রতি মাসে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ক্রেডিট কার্ডের ব্যালেন্স পরিশোধ করা আপনাকে ঋণের জন্য অতিরিক্ত জরিমানা দেওয়া ও উচ্চ হারে সুদ পরিশোধ করার দায় থেকে বাঁচাতে পারে। আপনার যদি ইতোমধ্যে অতিরিক্ত ঋণ থেকে থাকে, তবে আর্থিক সাক্ষরতা আপনাকে ঋণ থেকে দ্রুত বেরিয়ে আসার উপযুক্ত উপায়গুলো বেছে নিতে সাহায্য করবে।

জরুরি তহবিল সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা: কোনো অপ্রত্যাশিত বা আকস্মিক খরচ চলে আসলে সেটা সামাল দেওয়ার জন্য একটি আলাদা সঞ্চয়ী এ্যাকাউন্টে টাকা জমা করে জরুরি তহবিল তৈরি করা হয়। তেমন পরিস্থিতিতে এই জরুরি তহবিল আপনাকে তাৎক্ষণিকভাবে প্রয়োজন পড়া অর্থ সরবরাহ করে। আপনাকে নতুন করে ঋণগ্রস্ত হওয়া থেকে বাঁচাতে পারে। আর্থিকভাবে শিক্ষিত সঞ্চয়কারীরা জানেন জরুরি তহবিলের জন্য তাদের সাধারণত তিন থেকে ছয় মাসের সাংসারিক ব্যয় মেটানোর মতো সঞ্চয় আলাদা করে রাখা উচিত।

অবসর জীবনের জন্য সঞ্চয় পরিকল্পনা: জরুরি সঞ্চয়ী তহবিল গঠনের পাশাপাশি অবসর জীবনের জন্যও সঞ্চয় করে যেতে হবে। এটা হলো একটি দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য। আর্থিক সাক্ষরতার ফলে আপনি হিসেব করতে পারবেন কোন কোন উদ্দেশ্যের জন্য আপনার কতটা সঞ্চয় করতে হবে এবং কোন ধরনের সঞ্চয়ের জন্য কোন প্রকল্পগুলো বেশি উপযোগী।

কীভাবে আর্থিক সাক্ষরতা অর্জন করবেন
আপনি যদি আর্থিক ব্যবস্থাপনার বিষয়ে আরো সচেতন ও দক্ষ হয়ে উঠতে আগ্রহী হন, তবে বিভিন্ন উপায়ে নিজেকে সে ব্যাপারে সমৃদ্ধ করে তুলতে পারেন। আর্থিক বিষয়ে আরো ভালোমতো বুঝতে এবং ব্যক্তিগত অর্থ-ব্যবস্থাপনায় পারদর্শী হয়ে উঠতে পারেন।

* আপনার ব্যাংক, ক্রেডিট কার্ড ইস্যুকারী, অ-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ক্রেডিট ইউনিয়ন থেকে বিনামূল্যে সরবরাহকৃত তথ্যপূর্ণ ও শিক্ষামূলক সরঞ্জামগুলি দিয়ে শুরু করুন। কোনো কোনো ব্যাংকের এ্যাপ বা ওয়েবসাইট আপনার অর্থ-প্রবাহ (ক্যাশ-ফ্লো) ও ব্যয়ের অভ্যাস বুঝতে সাহায্য করতে পারে। আপনার ক্রেডিট কার্ড বিল বা স্টেটমেন্ট স্টাডি করে নিজের খরচগুলোর ধরন ও গতি-প্রকৃতির সঙ্গে পরিচিত হয়ে উঠতে পারবেন।
* আপনার ব্যয় এবং আর্থিক লক্ষ্যগুলোর উপর নজর রাখতে আপনি বিভিন্ন ফ্রি বাজেটিং এ্যাপ ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া ব্যবহার করতে পারেন বাজেট ওয়ার্কশিট, যা আপনি অনলাইনে পাবেন অথবা নিজেই কম্পিউটার কিংবা নোটখাতায় তৈরি করে নিতে পারেন।
* আপনার নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান কর্মীদের জন্য আর্থিক ব্যবস্থাপনা-বিষয়ক শিক্ষামূলক প্রোগ্রাম আয়োজন করতে পারে। স্থানীয়ভাবে প্রাপ্ত আর্থিক শিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারেন আপনি।
* যদি আপনার সুযোগ থাকে তবে কোনো আর্থিক উপদেষ্টা বা আর্থিক পরিকল্পনাকারীর সাহায্য নেওয়ার বিষয়টিও বিবেচনা করে দেখতে পারেন। আর্থিক লক্ষ্য নির্ধারণে তাদের যথেষ্ট দক্ষতা থাকে এবং উচ্চশিক্ষা ও অবসর জীবনের জন্য সঞ্চয়, ঋণ পরিশোধ ইত্যাদি বিষয়ে কার্যকরী কৌশল নিতে তারা আপনাকে বিশেষভাবে সহায়তা করতে পারেন।

জ্ঞানই শক্তি : আর্থিক সাক্ষরতা কোনো বিলাসিতা নয়, এটি একটি প্রয়োজনীয়তা। অর্থ-ব্যবস্থাপনার বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা আপনাকে আপনার যাবতীয় আর্থিক কর্মকান্ড ও পরিস্থিতির ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করবে। প্রকৃতপক্ষে, গভীর ও সুস্পষ্ট আর্থিক সাক্ষরতার ফলে আপনি অর্থ পরিচালনায় এতটাই আত্মবিশ^াসী হয়ে উঠতে পারেন যে, আপনি অন্যান্য বিষয়গুলোতে মনোনিবেশ করার আরো বেশি সুযোগ পাবেন। যেমন- আপনার পছন্দের কাজগুলো করা, শখ-আহ্লাদ পূরণ, পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে আনন্দঘন সময় কাটানো এবং জীবনের যে বিষয়গুলো অর্থ দিয়ে কেনা যায় না সেগুলোকে উপভোগ করা।